নাড়ির টানে ভোগান্তি নিয়েই ছুটছে মানুষ
২৩ মে দীর্ঘলাইনে অপেক্ষার পর যারা কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেয়েছিলেন, সেসব ঘরমুখো মানুষই আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন। ঈদকে সামনে রেখে অগ্রিম টিকিটের সিডিউল অনুযায়ী আজ দ্বিতীয় দিনের মতো কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন।
ঈদ এলেই টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষদের। তবুও ঘরে ফেরাতেই যেন সব আনন্দ। একঘেয়েমি জীবনের সাময়িক বিরতি দিয়ে কর্মজীবী এসব মানুষের সামনে আসে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মুহূর্ত। প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার ঐতিহ্য বাঙালির দীর্ঘদিনের। তাইতো শত ভোগান্তি-বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে মানুষ ছুটে চলেছেন নাড়ির টানে।
আজ সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে সব ট্রেনগুলো ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়ে ঠাসা। তবে অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনেগুলোয় মানুষের উপস্থিতি ছিল।
সকাল থেকে কিছুটা বিলম্বে ট্রেন ছেড়ে গেলেও চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে বলে স্টেশন থেকে জানানো হয়। ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় সকাল ৮টা হলেও ১০টা ৫৫ মিনিটে প্ল্যার্টফর্মে পৌঁছায়। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা একঘণ্টা বিলম্বে ১০টার পরে ছেড়ে যায়।
‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি গতকাল প্রায় ৭ ঘণ্টা বিলম্ব স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছায়। ফলে অতিরিক্ত একটি ট্রেনকে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের নামকরণ করে আজ কমলাপুর ছাড়ে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, গতকাল ট্রেনটি ব্যাপক লেট ছিল, সেই গ্যাপটা পূরণ করতে আমরা অন্য একটি ট্রেনকে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ নামকরণ করে আজকের মতো পাঠিয়েছি। তবে আগামীকাল থেকে রংপুর এক্সপ্রেস মূল ট্রেনটিই চলাচল করবে।
এদিকে তুলনামূলক খারাপ অন্য একটি ট্রেনকে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ নামকরণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। ট্রেনটির যাত্রী সোহেল বলেন, গত ২৩ মে দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনটির এসি টিকিট পেয়েছিলাম। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি কিন্তু রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি সিট আর এই এসি সিট এক নয়। তা হলে আমার এত ভোগান্তি সহ্য করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে কী লাভ হলো?’
কমলাপুরের স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ‘সকাল থেকে সারাদিনে ৫২টি ট্রেন আমরা চালাব। এর মধ্যে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন মিলে (সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ) ১৭টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটা ছাড়তে গতকাল সাত ঘণ্টা লেট হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের আশ্বাসে ভিত্তিতে আজকে আমরা বিকল্প রেক দিয়ে চালাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে (সোয়া ১০টয়) ছেড়ে গেল।
আসনবিন্যাসে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমিনুল হকও স্বীকার করেন।
এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ট্রেনটিতে আমরা সাধ্যমত আসন রিপ্লেস করেছি। দুটি এসি চেয়ারকোচ কম থাকাতে ফার্স্ট ক্লাস চেয়ারে বা ফার্স্ট ক্লাস কেবিনে সিট দিয়েছি। সবগুলো সিটই আমরা বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিট সঙ্কুলান করতে না পারায় কিছু সিট সাধারণ শ্রেণিতে দিতে হয়েছে।’
নীলসাগর এক্সপ্রেসের এরকম অসংখ্য যাত্রীদের এভাবে বসে থাকতে দেখা যায়।
এ ছাড়া খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১৯মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায় ৮টা ২০ মিনিটে।
চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি এক্সপ্রেস ট্রেনটিও আধাঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর ছাড়ে। সকাল সোয়া ৭টার দিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আধা ঘণ্টা দেরি করে ট্রেনটি পৌনে ৮টায় ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
এর বাইরে দেশের অন্যান্য গন্তব্যের ট্রেনের সময়সূচি নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এবার রোজার ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ে প্রথম যে দিনের আগাম টিকেট বিক্রি করেছিল, সেই ট্রেন ছাড়া শুরু হয়েছে শুক্রবার। কিন্তু প্রথম দিনই বেশ কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে গরমের মধ্যে যাত্রীদের পড়তে হয়েছে অপেক্ষার বিড়ম্বনায়।
ভোগান্তির জন্য যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘শনিবার থেকে আর কোনো ট্রেন বিলম্বে ছাড়বে না। যে কটি ট্রেন আজ দেরি করে ছাড়তে হয়েছে, সেগুলোর দিকে আলাদা নজর দিয়ে নির্ধারিত সময়ে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
শনিবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের তেমন একটা বাড়তি চাপ দেখা যায়নি।