• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নুসরাতের মৃত্যুতে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রতিক্রিয়া

নুসরাতের এ মর্মান্তিক মৃত্যু ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রকে যে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে

প্রকাশ:  ১২ এপ্রিল ২০১৯, ১১:২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষা কেন্দ্রে অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি ১০৮ ঘণ্টা বাঁচার লড়াইয়ে পরাস্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টাতেও তাকে বাঁচানো যায়নি। লম্পট অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিরাপোষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েই তাকে অগ্নিদগ্ধ হতে হয়েছে এবং পরিণতিতে মৃত্যু। এ মৃত্যু সংবেদনশীল প্রতিটি দেশবাসীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। এর মধ্যে সম্মানীয় শিক্ষামন্ত্রী, চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি ডাঃ দীপু মনিও রয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন তাঁর প্রতিক্রিয়া-
নুসরাত চলে গেলো। যাবেই জানতাম সবাই। বাঁচার কোনো আশাই ছিলো না। সবাই শোকাভিভূত।
আমাদের সবার শুধু নিজের কন্যাটি নয়, কন্যাসমা সকল নুসরাতের মতো সদ্য কৈশোর পেরোনো মেয়েগুলোর কথা মনে হচ্ছে। কিংবা সব নারীর কথা, হোক সে শিশু, কিশোরী, তরুণী, মাঝবয়সী বা তার চেয়েও বয়সে বড় কেউ। যারা মহানগরে, শহরে কিংবা গ্রামে থাকে। বিত্তবান কি বিত্তহীন, সে যে কোনো পরিবারেরই হোক। পোশাকে আধুনিক বা রক্ষণশীল কিংবা একেবারেই বোরখায় আবৃতা। মানুষরূপী অমানুষগুলো ঘরে, বাইরে যেখানে যখন যেভাবেই সুযোগ পাক নারীকে দেখে শুধুই দেহ এবং কতগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হিসেবে, শুধুই লালসা পূরণের বস্তু হিসেবে।
আমরা এতো এগিয়ে যাচ্ছি এতো দিকে। নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়েছি বহুদূর। কিন্তু নারীকে মানুষ ভেবে, তার মানুষ হিসেবে অধিকারের কথা ভেবে, তার মানবিক মর্যাদার কথা ভেবে কবে আমরা তাকে ঘরে, বাইরে, চলার পথে, কাজের জায়গায়, সর্বত্র নিরাপত্তা দিতে পারবো কি না জানি না। যাদের আমরা উন্নত দেশ বলি সেখানেও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটে অহরহই। সর্বত্রই তাই নারীর জন্যে নিরাপদ বিশ্ব গড়বার চেষ্টা চলছে। চলছে আমাদের দেশেও।
অনেক সহিংসতার খবরই আমরা পাই। কিন্তু নুসরাতের প্রতি ঘটে যাওয়া অপরাধ সবাইকে প্রচ- ধাক্কা দিয়েছে। সবাই আরও লজ্জিত, ক্ষুব্ধ হয়েছে, কারণ অপরাধী হিসেবে যাকে নুসরাত অভিযুক্ত করেছে, তার পক্ষে প্রতিবাদী মিছিল হয়েছে এবং অভিযুক্তের তারা নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নুসরাতের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নুসরাতের গায়ে আগুন দেবার অপরাধে এ পর্যন্ত দুজনকে আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আশা করি, অপরাধের যথোপযুক্ত বিচার হবে, অপরাধীদের শাস্তি হবে।
আজ নুসরাত সকল কিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছে। কোনো বিচার, কোনো শাস্তিই আর তাকে ফিরিয়ে আনবে না। কিন্তু নুসরাতের এ মর্মান্তিক মৃত্যু ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রকে যে প্রশ্নের সামনে আজ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তার উত্তর আমাদেরই দিতে হবে। আমাদেরই পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে, চলার পথে, সর্বত্র নারীর নিরাপত্তা, তার অধিকার, তার মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করতে হবে। সকল স্তরে এ সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যে কোনো ব্যত্যয়কে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যেনো কেউ এমন অপরাধ করবার সাহস না পায়। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে এ বিষয়গুলো এমনভাবে শেখাতে হবে যাতে এ মূল্যবোধগুলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। নারীর জীবনকে যে নিরাপদ ও মানবিক মর্যাদাপূর্ণ করতে আজ আমাদের করতে হবে আইনের কঠোর প্রয়োগ, আগামী প্রজন্মের জন্যে তা যেনো হয় সমাজের স্বাভাবিক রীতির অংশ। প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে আসুন নারীর প্রতি যে কোনো সহিংসতা প্রতিরোধ করি। ঘরে, বাইরে, পথে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, সর্বত্র।
নুসরাতের জন্যে অশেষ ভালোবাসা।

 

সর্বাধিক পঠিত