• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জের দুই যুবকের মৃত্যু

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পূর্বে দুই ভাইয়ের সাথে কথা বললেন ফরিদগঞ্জের আল আমিন

প্রকাশ:  ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ বাংলাদেশীর মধ্যে দু’জনের বাড়ি চাঁদপুরে। এদের একজন হলেন আল আমিন (২৫), অপরজন হলেন সোহেল (২৪)। আল-আমিনের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাগল গ্রামে। আর সোহেলের বাড়ি হাজীগঞ্জের ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বশির মেম্বার বাড়ি। এ বাড়ির আনোয়ার হোসেনের একমাত্র ছেলে সোহেল।
ফরিদগঞ্জের চরভাগল গ্রামের মাওলানা আমির হোসেনের তিন ছেলের মধ্যে আল-আমিন সবার বড়। অন্যরা হলো : কামরুল হাসান ও তাহিদ। মাত্র ৭ মাস আগে পাশের বাড়ির মিলন গাজীর ছেলে রাসেলের সঙ্গে আল-আমিন জীবিকার সন্ধানে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যায়। ৭ এপ্রিল রোববার রাতে দুর্ঘটনার পর গতকাল সোমবার সকালে আল-আমিনের মৃত্যুর সংবাদ তার গ্রামের বাড়িতে পেঁৗঁছে। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আশপাশের প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত¡না দিতে ছুটে আসেন। পুরো এলাকায় শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, একটু স্বচ্ছলতার জন্যে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে আল-আমিনকে বিদেশ পাঠান তারা। এমন পরিস্থিতিতে তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের উপর যেনো এখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলো।
নিহতের বাবা মাওলানা আমির হোসেন জানান, ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ছেলে আল-আমিনকে মালয়েশিয়া পাঠান। এর মধ্যে বেশকিছু টাকাও পাঠিয়েছে আল-আমিন। তিনি আরো জানান, তিন লাখ টাকা অন্যের কাছ থেকে ধার করে ছেলেকে সেখানে পাঠিয়েছি। আল-আমিনের মা আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার আল-আমিনকে তোমরা নিয়ে আসো।
মেজ ভাই হাঁসা মাদ্রাসার ছাত্র কামরুল হাসান জানায়, তার বড় ভাই আল-আমিন চির্কা চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও তার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি। সংসারের টানাপোড়েন ঢাকতে প্রবাস জীবনকে বেছে নেয়। নিজে পড়ালেখা শেষ না করলেও দুই ভাইয়ের প্রতি লেখাপড়া করার জন্যে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করতো। প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পূর্বে নিয়মিত ফোন করে সকলের সাথে কথা বলতো আল-আমিন।
কামরুল হাসান আরো জানায়, সর্বশেষ রোববার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় চাকুরিতে যাওয়ার পূর্বে তার সাথে এবং ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলেন আল-আমিন। এ সময় তাদের কাছে পরিবারের সকলের খোঁজ খবর নেন। তখন আল-আমিন বলেছিলো, আজ-কালকের মধ্যেই কিছু টাকা পাঠাবে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করায় তার আর টাকা পাঠানো হলো না।
প্রতিবেশি মিলন গাজী বলেন, তার ছেলে রাসেলের সঙ্গে আল-আমিন মালয়েশিয়া যায়। তিনি আরো জানান, সোমবার ভোরে দুর্ঘটনার সংবাদ পান তারা।
দ্রুত সময়ের মধ্যে আল-আমিনের মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশিরা। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের কাছের একটি সড়কে বাংলাদেশীসহ আরো কয়েকটি দেশের শ্রমিকরা কর্মস্থলে যাবার পথে বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ সময় ৫ বাংলাদেশীসহ ১১ জন নিহত হয়। এতে আরো বেশ কজন আহত হয়।