• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

২৫ লাশের সাথে একাকার হলো মতলবের রেজাউল, ফরিদগঞ্জের তমাল ও কচুয়ার চঞ্চল

প্রকাশ:  ৩০ মার্চ ২০১৯, ১১:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুন ট্র্র্যাজেডির রেশ না কাটতেই আবার বনানীতে ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটলো। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ২৫ জন দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এ মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে আছেন আরো ক’জন।
এদিকে বনানীর শোকাবহ এ ঘটনাকে চাঁদপুরের মানুষকে আরো বেশি শোকার্ত করে তুলেছে এই ২৫ লাশের সাথে চাঁদপুরের তিনটি তাজাপ্রাণ যুক্ত হওয়ায়। ভয়াবহ এ ঘটনায় মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও কচুয়ার তিনজন মারা গেছেন। এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৭৮ জন মারা গেছে। সে ঘটনায় হাজীগঞ্জের দু’জন ও ফরিদগঞ্জের দু’জন মারা যায়। আর গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকা-ের ঘটনায় চাঁদপুরের তিনজন মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হলো।
নিহতরা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি ইউনিয়নের শ্রীকালিয়া গ্রামের মুন্সি বাড়ির মকবুল আহমেদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমাল, মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের নাগদা গ্রামের নাজমুল হাসান বেনু প্রধানিয়ার ছেলে রেজাউল করিম রাজু এবং কচুয়া উপজেলার ৩নং বিতারা ইউনিয়নের বাইছাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আতাউর রহমান চঞ্চল।
তমাল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার আগুনে দগ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তার বন্ধু মিনহাজ উদ্দিন। মিনহাজ আরো জানান, তমাল ঢাবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০০৬-০৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলো। পাস করেছেন ২০১১ সালে। তিনি ইইউআরবিডি সলিউশন-এ সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। আগুনে তার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে।
তমালের চাচাতো ভাই ফরিদগঞ্জের শ্রীকালিয়া গ্রামের সালাহউদ্দিন জানান, তমালরা সপরিবারে ঢাকার সারুলিয়ায় বসবাস করেন। তার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে তমাল দ্বিতীয়। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত মতলব দক্ষিণ উপজেলার নাগদা গ্রামের রেজাউল করিম রাজু এফআর টাওয়ারের ৫ম তলার আসিফ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। ওই ভবনের ৫তলার পুরো প্লটটি তিনি ক্রয় করে ব্যবসা করতেন। রাজু ১ ভাই ৩ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। রাজু স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তান নিয়ে বনানীতে থাকতেন। বাবা বেনু প্রধানীয়া চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ী। তবে রাজুদের গ্রামের বাড়ি মতলব দক্ষিণে হলেও চট্টগ্রামে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
রাজুর চাচা শ^শুরের ছেলে ট্রাভেল্স ব্যবসায়ী হাজী জসিম উদ্দিন বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে আমরা তার মৃতদেহ সনাক্ত করেছি। তাকে চট্টগ্রামে দাফন করা হয়েছে। নিহত রাজুর চাচা শাহজাহান জানান, শুক্রবার বাদজুমা চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার মোগলটুলি এলাকায় তার লাশ দাফন করা হয়। রাজু হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের ওড়পুর গ্রামে বিবাহ করেন। তার শ^শুর পরিবারের সকল সদস্য লন্ডন প্রবাসী। তার শ^শুরের নাম খোরশেদ আলম মাস্টার।
হাজীগঞ্জের রামপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম মানিক জানান, রাজু একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। তারা কেউ এলাকাতে থাকে না। রাজুর বাবা চট্টগ্রামের একজন বড় ব্যবসায়ী।
অপর নিহত আতাউর রহমান চঞ্চলের চাচাতো ভাই দনিয়া বিশ^বিদ্যালয় কলেজের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারম্যান মুন্সী নূরুল আলম বেলাল জানান, চঞ্চল ক দিন আগে বনানীতে অফিস স্থানান্তর করে। ঘটনার সময় চঞ্চল শেষবারের মতো তার ছেলে ইঞ্জিঃ ইফরানুর রহমানকে ফোন করে বলেন, আমি ছাদে আছি। কিন্তু পরবর্তীতে তার ছেলেসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে ভবনের ছাদসহ কোথাও খুঁজে না পেয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করে। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সিএমএইচ থেকে তার লাশ শনাক্ত করে পরদিন শুক্রবার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
চঞ্চলের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।  নিহতের মেয়ে তাসনিয়া রহমান বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষ করেছেন।
কচুয়ার বিতারা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবদুল বারেক প্রধান বলেন, চঞ্চল বাংলাদেশ বিমানে চাকুরি করতেন। চাকুরি শেষ হওয়ার পর অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের একটি ট্রাভেলসে চাকুরিতে যোগ দেন। আগুনে তার শরীর ৯০ভাগ পুড়ে গেছে।