• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ইলিশ উৎপাদন ও জাটকা সংরক্ষণে গবেষণা অগ্রগতি পর্যালোচনা শীর্ষক কর্মশালা

সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৩:২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট


বিমল চৌধুরী ও মুহাম্মদ আবদুর রহমান গাজী ॥ ‘কোনো জাল ফেলবো না, জাটকা ইলিশ ধরবো না’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০১৯ উদ্যাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর উদ্যোগে চাঁদপুরে ‘ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভয়াশ্রমের প্রভাব, মজুদ নিরূপণ ও জাটকা সংরক্ষণে গবেষণা অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক দিনব্যাপী  কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২৩ মার্চ শনিবার দিনব্যাপী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইলিশ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একক মৎস্য প্রজাতি। এটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইলিশ পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে দেশে জাটকা রক্ষার্থে ইতোমধ্যে ৬টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাটকা সংরক্ষণ এবং ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভয়াশ্রমের প্রভাব সম্পর্কে আজকের কর্মশালায় গবেষণাভিত্তিক ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ আশি^নের ভরা পূর্ণিমার পূর্বের ৪ দিন, পূর্ণিমার দিন এবং পূর্ণিমার পরের ১৭ দিন অর্থাৎ মোট ২২ দিনের জন্যে সারাদেশের নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত ১০ বছরে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৮ ভাগ। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির বর্তমান এই ধারা অব্যাহত রাখাই আমাদের জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্যে ইলিশের মজুদ নিরূপণ ও সর্বোচ্চ সহনশীল আহরণ মাত্রা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আরো নিবিড় গবেষণা পরিচালনা করতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের ইলিশসহ মৎস্য খাতের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। ইলিশ বিষয়ে নিবিড় গবেষণা অব্যাহত রাখার জন্য ২০১৬-২০১৭ আর্থিক বছর হতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতায় ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ শীর্ষক ১টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীগণ ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে নবপ্রযুক্তি উদ্ভাবনে তারা আরো সচেষ্ট হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ ইলিশের টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধি নির্ভর করে এর প্রজনন সফলতা, জাটকা রক্ষা এবং মাছ আহরণের পরিমাণের ওপর। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির মূলে রয়েছে জাটকা রক্ষা। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইলিশ সম্পদের ওপর অব্যাহত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইতিমধ্যে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ইলিশের সুনির্দিষ্ট প্রজনন ক্ষেত্র, জাটকার বিচরণক্ষেত্র সনাক্ত করেছেন। ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সরকার বিভিন্ন নদ-নদীর জাটকা প্রধান অঞ্চলে ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে । একেকটি অভয়াশ্রম ইলিশ উৎপাদনের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করছে। ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে মোট ২২ দিন সারা দেশের সাগর, নদ-নদীতে প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিএফআরআই থেকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (এচঝ) ব্যবহার করে এসব অভয়াশ্রম এলাকার জিপিএস পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে উক্ত অভয়াশ্রমগুলোতে আহরণ নিষিদ্ধকালে যথোপযুক্তভাবে জাটকা নিধন প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে এবং ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রণীত ইলিশ/জাটকার উন্নত ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নের ফলে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লক্ষ ১৭ হাজার মে. টনে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে জাটকা ও প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে ইলিশের আকার অনেক সুষম হয়েছে। বাজারে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন আকারের ইলিশ মাছ প্রায় সব সময়েই পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশসহ সকল মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারা কিভাবে ধরে রাখা যায়, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের নিরলসভাবে গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে ইলিশের প্রকৃত মজুদ এবং সর্বোচ্চ সহনশীল উৎপাদন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। গত ২০১৬-১৭ সালে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস্ অধিদপ্তর, আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের ভৌগোলিক নিবন্ধন (জিআই সনদ) প্রদান করেছে। এটি আমাদের গর্ব ও বিশেষ অর্জন। তিনি আরো বলেন, দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ ইলিশ সম্পদ রক্ষার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৎস্য অধিদপ্তর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাটকা সমৃদ্ধ ১৭টি জেলার ৮৫টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ২ লক্ষ ৩৮ হাজারেরও অধিক সুফলভোগী জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য মোট ৩৮ হাজার ১ শত ৮৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে, যা অতীতের কোনো সরকার করেনি। জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ভিজিএফ প্রদানের ফলে তাদের অন্নের সংস্থান সুনিশ্চিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকছে। এটা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী সাফল্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কর্মশালার বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপ্রধানে  বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব  মোঃ রইছউল আলম মন্ডল,  মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক  আবু সাইদ মোঃ রাশেদুল হক, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, জেলা নৌ পুলিশ সুপার মোঃ জমসের আলী প্রমুখ। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ও মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  মোঃ মনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন  মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওঃ মোঃ শাহজাহান।
উপস্থিত ছিলেন  মৎস্য  বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তা ও মৎস্য চাষীবৃন্দ এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।