উৎসবমুখর পরিবেশে জাতির জনকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন
শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি ভালোবাসা ছিলো বলেই শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হয়েছেন : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্থপতি শতাব্দীর মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী চাঁদপুরের উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল ১৭ মার্চ রোববার সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির নেতৃত্বে চাঁদপুর শহরে এক বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। র্যালিটি অঙ্গীকারের সামনে থেকে শুরু হয়ে হকার্স মার্কেটের সামনে দিয়ে শপথ চত্বর হয়ে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এসে শেষ হয় এবং পরে এ স্থানে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, এ মহান মানুষটির যদি জন্ম না হতো তাহলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। যে মানুষটি তাঁর জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে। যিনি কারাবরণসহ পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতনের পরও মনোবল হারাননি। যিনি ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও বলেছিলেন, আমি আমার অধিকারের কথা, বাঙালির স্বাধীনতার কথা বলবোই বলবো। কোনো ভয়-ভীতিই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর নীতি-আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেনি। তিনি ছিলেন নীতিতে অবিচল। বিশাল আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেছেন বাঙালি জাতির মুক্তির জন্যে। তিনি নিরস্ত্র বাঙালিকে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জাগ্রত করেছেন। তাঁর ভাষণে উজ্জ্বীবিত হয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, যে ভাষণ আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত। তাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।
তিনি আরো বলেন, যদি এ সিংহপুরুষ স্বাধীনতার ডাক না দিতেন, এদেশ যদি স্বাধীন না হতো, তাহলে আমাদের কী অবস্থা হতো, তা কী আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? অথচ এ মহান মানুষটিকে কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবার-পরিজনদের, হত্যা করা হয়েছে জাতীয় চার নেতাকে।
তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা শিশু-কিশোরদেরকে জাতির জনকের জীবনী সম্পর্কে জানাবেন। তাহলে তারা অনেক কিছু জানতে পারবে, শিখতে পারবে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে শিক্ষিত জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। তাই তিনি যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি স্বাধীন দেশে, যার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিলো খুবই নাজুক, এমনি পরিস্থিতিতে তিনি সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন, নারীদের উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। আজ তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু হচ্ছে। যা কোনো একসময় ছিলো কল্পনাতীত। অথচ তা-ই আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। দেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যারা জঙ্গিবাদ মৌলবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, তাদেরকে প্রতিহত করে বাংলার উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবোÑবঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিবসে এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সভাপ্রধানে আলোচনা সভায় অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোঃ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মঈনুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শওকত ওসমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জামাল হোসেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, এনএসআই চাঁদপুরের ডিডি এবিএম ফারুক, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী চাঁদপুরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালি পূর্বে অঙ্গীকারের সামনে স্থাপিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শিক্ষামন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি র্যালির উদ্বোধন ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন।