বাবুরহাট বাজারে অগ্নিকান্ডে ৩টি দোকানসহ ১২টি গোডাউন ভস্মিভূত
৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
চাঁদপুর শহরতলির পৌর ১৪নং ওয়ার্ড বাবুরহাটে গ্রামীণফোনের টাওয়ারের জেনারেটর বিস্ফোরণে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার ৯ মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বাবুরহাট মধ্যবাজারে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে মালামাল পুড়ে গিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ও ব্যবসায়ীরা প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন জানান, আগুনে দোকানদারদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ কেটে দেয়া হয়। এতে করে আগুন ছড়িয়ে না যাওয়ায় বাজারের অন্য দোকানগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
জানা যায়, পল্লী বিদ্যুতের মেইনলাইনে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে বাবুরহাটসহ আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। মোবাইলফোন কোম্পানী গ্রামীণফোনের টাওয়ার বারেক সুপার মার্কেটের ৫ তলা ভবনের ছাদে ও তাদের জেনারেটর নিচতলার পাশেই ছিল। সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর বিরতিহীনভাবে চালু থাকার কারণে জেনারেটরের বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান। জেনারেটরের পাশেই ছিল বাজারের লেপ-তোশক ব্যবসায়ী ইকবালের গোডাউন। বিস্ফোরণের পর তুলার মধ্যে আগুন লাগার কারণে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। ফলে কয়েকটি গোডাউনসহ দাউ দাউ করে দোকান পুড়তে থাকে।
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রহমানিয়া এন্টারপ্রাইজের জুতার দোকান ও বাসনা জুয়েলার্সের স্বর্ণের দোকান, মা হার্ডওয়ার ও সেনেটারি দোকানের ৩টি গোডাউন, গাজী বোডিংয়ে মালিক ইকবালের তুলার গোডাউন, মাতৃভা-ার হোটেলের পেছনের অংশ, নাছির এন্টারপ্রাইজের নগদ টাকাসহ গোডাউনে রাখা মালামাল, কাজী ইলেক্ট্রনিক্স ও হার্ডওয়ারের মালিক শামিম কাজীর গোডাউন, বাজারের জেনারেটর ব্যবসায়ী আবু সালেহর বন্ধ করে রাখা গোডাউন, ব্যবসায়ী মিরুর ফলজ গোডাউন, রহমান এন্টারপ্রাইজের গোডাউন, কাজী মোস্তফার ফলজ গোডাউন ও আবুল খালেকের গোডাউন।
বারেক সুপার মার্কেটের নিচতলার ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষদর্শী বিপ্লব আচার্য ও মির্জা ফার্মেসীর রাব্বী জানান, আমরা দুজন খুব নিকটেই ছিলাম। যখন জেনারেটরের বিস্ফোরণ ঘটে তখন সাথে সাথে তুলার গোডাউনে আগুন লাগে। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাবুরহাট বাজার ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা মালামাল নিয়ে দিগি¦দিক ছুটতে থাকে। বারেক সুপার মার্কেটের ৩য় তলা ও ৪র্থ তলায় বসবাসরত মহিলা ও শিশুরা উপর থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করে। এতে কয়েকজন আহতও হয়।
চাঁদপুর উত্তর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ মনির জানান, যে স্থানে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ঘটেছে সে স্থানে রাস্তার উপর ভ্রাম্যমাণ হকার বসায় আমাদের গাড়িগুলো বাজারের ভেতরে প্রবেশ করতে অনেকটা দেরি হয়েছে। তাছাড়া বাজারটিতে কোনো রিজার্ভ পানির ট্যাংকি ছিল না। আমরা প্রথমে আমাদের গাড়ির রিজার্ভ পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। জলাশয় দূরে থাকায় পানি আনতে একটু সময় লেগে যায়। সেখান থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪টি ইউনিট কাজ করেছে। প্রায় ৪৫ মিনিট চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।
তিনি আরও বলেন, বাবুরহাট বাজারটি চাঁদপুরের একটি প্রসিদ্ধ বাজার। বাজার ব্যবসায়ীরা অগ্নিনির্বাপণ কোনো ব্যবস্থাই রাখছে না। তাছাড়া বাজারের একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রায় ৫০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পানি রিজার্ভ ট্যাংকি রাখা প্রয়োজন।
স্থানীয়রা জানান, আগুন লাগার পরে আশপাশের বাসাবাড়ির লোকজন ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত বেরিয়ে আসে। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিকেল সাড়ে ৪টায় অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ¦ নাছির উদ্দিন আহমেদ। অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের খোঁজ-খবর নিয়ে তিনি তাদেরকে সান্ত¡না প্রদান করেন।