৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে স্টিমার বিকল ॥ যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ
চাঁদপুরে ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিআইডব্লিউটিসি-এর রকেট স্টিমার পিএস টার্ন বিকল হয়ে পড়ে মঙ্গলবার রাত ১২টায়। এরপর থেকে শত শত যাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঢাকা থেকে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্যে যে ভাড়া দিয়ে টিকিট ক্রয় করেছিল গন্তব্যে না নিতে পারলেও কর্তৃপক্ষ তাদের ভাড়ার টাকা ফেরৎ দেয়া হচ্ছে না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। স্টিমারটি সচল করে বুধবার দুপুর ৩টায় চাঁদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যার ফলে শত শত যাত্রী বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৭ ঘন্টা পর্যন্ত সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। চাঁদপুর শহরের এক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, টিকিটের টাকা ফেরৎ চাইলে তার সাথে খারাপ আচরণ করেন ঘাটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
কিছু সংখ্যক যাত্রী রাতে ও বুধবার দিনে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। প্রায় ২ শতাধিক যাত্রী এখনও চাঁদপুর রকেট ঘাটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এদের মধ্যে নবজাতক শিশুসহ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীও রয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে বেলা ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে জাহাজ পিএস টার্ন ছেড়ে গেছে। যাত্রীদেরকে চাঁদপুর ঘাটেই নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা নৌ-টার্মিনাল থেকে পিএস টার্ন জাহাজটি ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে দক্ষিণাঞ্চল অভিমুখে ছেড়ে আসে। রাত অনুমান সাড়ে ১২টায় জাহাজটি বিকল হয়ে পড়ে। যার ফলে জাহাজের ইনচার্জ হাফিজুর রহমান চাঁদপুর রকেট ঘাটে জাহাজটি ভেড়াতে মারাত্মক বেগ পেতে হয়েছে।
হাফিজুর রহমান জানান, জাহাজটি দু’মাস পর ডকইয়ার্ড থেকে নামিয়ে যাত্রী নিয়ে মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চল অভিমুখে যাচ্ছিল। চাঁদপুরের নিকটে আসার পর জাহাজটির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। যার ফলে যাত্রী নিয়ে জাহাজটি আর গন্তব্যে যেতে পারেনি। চাঁদপুর ঘাটেই জাহাজটি যাত্রা বিরতি করতে বাধ্য হয়। তিনি আরও জানান, লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রীই রাতে বিকল্পভাবে নিজেরা নিজ গন্তব্যে চলে যায় বলে শুনেছি। তার কাছে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বলেন, আমরা যাত্রীদেরকে চাঁদপুর স্টিমার (রকেট) ঘাটে পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। তারা সেখান থেকেই লঞ্চযোগে গন্তব্যে গিয়েছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষ বিকল্প কোনো জাহাজ না দিয়েই যাত্রীদেরকে নিজ গন্তব্যে পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন।
গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩টায় চাঁদপুর রকেট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ২ শতাধিক যাত্রী পন্টুনে নিদারুণভাবে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। পিরোজপুর মঠবাড়িয়ায় যাত্রী রুনু বেগম জানান, আগের দিন রাত ১টায় জাহাজটি বিকল হয়ে পড়লে এই ঘাটে এনে রাখা হয়। আমরা শিশুদের নিয়ে এখানে কষ্টের মধ্যে রয়েছি। জাহাজ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বিকল্প কোনো পথ দেখাচ্ছে না। একই এলাকার যাত্রী মোঃ গিয়াসউদ্দিন বলেন, সকাল ৯টার দিকে জাহাজ কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে জাহাজ থেকে নামিয়ে দেয়। তারা আমাদের কাছ থেকে যে ভাড়া নিয়েছিল তা চাওয়া হলে ফেরৎ দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর স্টিমার ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম জানান, ঘাটে যে সমস্ত যাত্রী রয়েছে আমরা তাদেরকে আজকের (বুধবার) রাতে নির্ধারিত জাহাজ এমভি মাহসুদ যোগে গন্তব্যে পাঠাব। তাই তাদেরকে চাঁদপুর রকেট ঘাটে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। জাহাজটি যদি বিকল হয়ে থাকে তাহলে গতকাল বুধবার দুপুর ৩টায় কিভাবে চাঁদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেল এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী যাত্রীদের।
এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক ও চাঁদপুর নৌ থানার ওসি রেজাউল জানান, চাঁদপুরে সরকারি জাহাজ পিএস টার্ন বিকল হওয়ার ঘটনাটি আমাদের জানা নেই। এই বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ আসেনি কিংবা অভিযোগ করেনি