ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন
দলের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি : ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া
চাঁদপুরের পুলিশ বিভাগের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছি : ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি
গত ২৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবসহ বক্তব্য রাখেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া।
আবুল খায়ের পাটওয়ারী বর্ধিত সভার বৈধতাসহ সকল নিয়ম মেনে এ সভা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এমপির গত ১৫ জানুয়ারি প্রেরিত চিঠির প্রেক্ষিতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গত ২০ জানুয়ারি প্রেরিত চিঠির সূত্র মোতাবেক আমরা ২৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা আহ্বান করি। আমি সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারের যৌথ স্বাক্ষরে আমরা সভার আয়োজন করি। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি এবং সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারীকে বিশেষ অতিথি করা হয়। ২৯ জানুয়ারি যথাসময়ে আমরা সভা শুরু করি। সভার ব্যানারে সভাপতিত্ব আমার নাম এবং পরিচালনায় সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারের নামও লেখা ছিলো। তবে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনিবার্য কারণবশতঃ সভায় উপস্থিত হতে না পারলেও আমাদেরকে সভা চালিয়ে যেতে বলেন। সভা সুন্দরভাবে শুরু হয়ে শেষও হচ্ছিল। আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সকল সদস্য এবং পৌর, সকল ইউনিয়ন ও সকল ওয়ার্ডের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক সভায় উপস্থিতও হন। সভার শেষ পর্যায়ে এসে হঠাৎ বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের সামনে আমাদের বর্ধিত সভায় হামলা করে। একই সাথে পুলিশও আমাদের সভার দিকে টিয়ারশেল এবং গুলি ছোড়ে। এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী গুরুতর জখম হন। তাদের অনেকে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই সন্ত্রাসীরা আমাদের সাবেক এমপি ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার গাড়িও ব্যাপক ভাংচুর করে। পুলিশের সামনেই এমন তা-ব চালালেও পুলিশ তাদেরকে কিছু না করে আমাদের নিরীহ নেতা-কর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের এমন ঘটনায় আমরা হতবাক এবং বিস্মিত। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধারণকৃত পুরো ঘটনার ভিডিওচিত্র আমরা চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই আজ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি-চাঁদপুরের পুলিশ বিভাগের উপর আমরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। খায়ের পাটোয়ারী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। এখন ওনার কর্মসূচি হচ্ছে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজদের চিরতরে উৎখাত করা। তাই আমি প্রশাসনের প্রতি অনুুরোধ করবো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী ওইসব সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে ফরিদগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করুন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে এ সভায় কারা কারা থাকতে পারবেন। সে অনুযায়ীই আমরা প্রত্যেককে চিঠি দিয়েছি। এমপি মহোদয়ের উপস্থিতি নিয়মের মধ্যে না পড়লেও আমরা তাঁকে সভায় উপস্থিত থাকার জন্যে দুইদিন যাবৎ ওনার সাথে ফোনে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও অনেকবার তাঁকে ফোন দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো কার্পণ্যতা ছিলো না।
সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনার সাথে কারা জড়িত, তাদের পরিচয় কি তা খুঁজে বের করতে আমি আমার দলের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করার দাবি জানাচ্ছি। আর ফরিদগঞ্জবাসীর দাবি হচ্ছে-যেহেতু পুলিশ এখানে জড়িত, তাই পুলিশের ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঘটনার নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, বর্তমান সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলম পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ এবং মতলবের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কেএম মাসুদ। উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, গোলাম কিবরিয়া জীবন, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা , জিএম শাহীন, সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি ফারুক আহমেদ, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌসসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক। আর সাংবাদিকদের বাইরে উপস্থিত ছিলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান রানা, চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়াসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতৃবৃন্দ।