প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার শপথের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের পথচলা শুরু
শপথ নিলেন একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ৪৬ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। তাঁদের শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হলো নতুন সরকারের পথচলা। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বঙ্গভবনে ধাপে ধাপে শপথ অনুষ্ঠান হয়। নিয়ম অনুযায়ী সবার আগে বিকেল ৩টা ৩৯ মিনিটে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
প্রধানমন্ত্রীর শপথের পর পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা শপথ নেন। তাঁরা প্রথমে পদের শপথ এবং পরে গোপনীয়তার শপথ নেন। পরে শপথের স্বাক্ষর করেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
এ শপথের মধ্য দিয়েই টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিলো আওয়ামী লীগ। নতুন ও পুরনোর সমন্বয়ে গঠিত এ মন্ত্রিসভায় রয়েছেন ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী।
নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং সকাল সাড়ে ১০টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন।
নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও তাঁদের দপ্তরের তালিকা : প্রধানমন্ত্রী; বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তাঁর হাতে থাকছে-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
২৪ জন মন্ত্রী : আ ক ম মোজাম্মেল হক-মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ওবায়দুল কাদের-সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক-কৃষি মন্ত্রণালয়, আসাদুজ্জামান খান কামাল-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মোঃ হাছান মাহমুদ-তথ্য মন্ত্রণালয়, আনিসুল হক-আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আ হ ম মোস্তফা কামাল-অর্থ মন্ত্রণালয়, তাজুল ইসলাম-স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, ডাঃ দীপু মনি-শিক্ষা মন্ত্রণালয়, একে আব্দুল মোমেন-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এম এ মান্নান-পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন-শিল্প মন্ত্রণালয়, গোলাম দস্তগীর গাজী-বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, জাহিদ মালেক-স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সাধন চন্দ্র মজুমদার-খাদ্য মন্ত্রণালয়, টিপু মুনশী-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নুরুজ্জামান আহমেদ-সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ ম রেজাউল করিম-গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মোঃ শাহাবুদ্দিন-পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বীর বাহাদুর উশে শিং-পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী-ভূমি মন্ত্রণালয়, মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন-রেলপথ মন্ত্রণালয়, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং মোস্তাফা জব্বার-ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও মোস্তাফা জব্বার টেকনোক্র্যাট কোটায় শপথ নিয়েছেন।
১৯ জন প্রতিমন্ত্রী : কামাল আহমেদ মজুমদার-শিল্প মন্ত্রণালয়, ইমরান আহমেদ-প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাহিদ আহসান রাসেল-যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, নসরুল হামিদ-বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, আশরাফ আলী খান খসরু-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মুন্নুজান সুফিয়ান-শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী-নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাকির হোসেন-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শাহরিয়ার আলম-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জুনাইদ আহমেদ পলক-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ফরহাদ হোসেন-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বপন ভট্টাচার্য্য-স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, জাহিদ ফারুক-পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মুরাদ হাসান-স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শরীফ আহমেদ-সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, কে এম খালিদ-সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মোঃ মাহবুব আলী-বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ টেকনোক্র্যাট কোটায় শপথ নিয়েছেন।
৩ জন উপমন্ত্রী : বেগম হাবিবুন নাহার-পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, একেএম এনামুল হক শামীম-পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মহিবুল হাসান চৌধুরী-শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ছবি : ০১
চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা, যার নেতৃত্বে চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিলো আওয়ামী লীগ।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন।
প্রধানমন্ত্রী শপথ নেয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাঁকে অভিনন্দন জানান। এরপর নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
রাষ্ট্র পরিচালনায় এবার শেখ হাসিনার সঙ্গী হচ্ছেন ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩জন উপমন্ত্রী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ের পর শেখ হাসিনা তাঁর নতুন সরকার সাজিয়েছেন মূলত নতুনদের নিয়ে।
শেখ হাসিনা শপথ নেয়ার পর ছোট বোন শেখ রেহানা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন সূচনায় পরস্পরের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে নেন, গালে চুমু খান। পরে হাত নেড়ে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ রেহানা ছাড়াও তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক স্ত্রী পেপপিকে নিয়ে এসেছিলেন নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলও শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সিইসি কে এম নূরুল হুদা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা নতুন সরকারের অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, একুশে টিভির সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এবং চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ এসেছিলেন শপথ অনুষ্ঠানে।
মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা শপথ নিতে বঙ্গভবনে আসতে শুরু করেন বেলা ৩টার আগেই। তারা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, মেতে ওঠেন হাস্যরসে।
নতুন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পা ছুঁয়ে সালাম করতে দেখা যায়। আগের সরকারের মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শামসুর রহমান শরীফের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে দোয়া চান নতুন অনেকে।
একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসার সিদ্ধান্ত নেয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বা তাঁর স্ত্রী গত সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।
তবে জোট শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম উপস্থিত ছিলেন দরবার হলে।
নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত, এএইচ মাহমুদ আলী, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, কামরুল ইসলাম, শামসুর রহমান শরীফ শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন।
গত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা এইচটি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও গওহর রিজভীও ছিলেন বঙ্গভবনে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিকেলে বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি তাঁকে স্বাগত জানান। পরে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান কিছুক্ষণ একান্তে আলাপ করেন বলে বঙ্গভবনের এক কর্মকর্তা জানান।
সাড়ে ৩টা দরবার হলে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের মাঠে চা-চক্রে যোগ দেন সবাই। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলেন।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ায় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি গঠিত পুরানো সরকারের দায়িত্ব শেষ হলো। প্রধানমন্ত্রী পরে নতুন করে তাঁর উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন।
রেকর্ড চতুর্থ মেয়াদ : শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান দুই বোন হাসিনা ও রেহানা। পরের ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছরের মাথায় সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের সময়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে বসেন বিরোধী দলীয় নেতার আসনে।
তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯০ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে মিলে একনায়ক এরশাদ সরকারের পতন ঘটায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে গিয়ে আবার বিরোধী দল হয়।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তার সেই সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির কথা বলা হয়।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে তৃতীয়বারের মতো বিরোধী দলীয় নেত্রী হন শেখ হাসিনা। ওই সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আরও অনেক রাজনীতিবিদের মতো শেখ হাসিনাও গ্রেপ্তার হন। দুই বছরের মাথায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
বিএনপি ও তাদের শরিকদের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের ভোট হয়, তাতে ২৩১টি আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ।
সেই সরকারের মেয়াদ শেষে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলই অংশ নেয়। ভোটের ফলাফলে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পায় ২৮৮ আসন।
গত ৩ জানুয়ারি সকালে জাতীয় সংসদে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথের পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে টানা তৃতীয় মেয়াদে তাকে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি।
সোমবার শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থ মেয়াদ শুরু করলেন শেখ হাসিনা।
বিশ্বের নারী নেত্রীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি দিন সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কাতারে শেখ হাসিনার অবস্থান মেয়াদের দিক দিয়ে তৃতীয়।
*শ্রীলঙ্কার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকে আধুনিক বিশ্বের প্রথম নারী সরকারপ্রধান ছিলেন। সিলন ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তিন দফায় ১৭ বছর ২০৮ দিন দায়িত্ব পালন করেন।
* দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী। ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই দফায় মোট ১৬ বছর ১৫ দিন তিনি ভারত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
* বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত দুই দফায় মোট ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সোমবারই তিনি শপথ নিয়েছেন আরও পাঁচ বছরের জন্যে। এই মেয়াদ পুরো হলে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।
* ক্যারিবিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া ডোমিনিকা প্রজাতন্ত্রের ইউজিনিয়া চার্লস ক্ষমতায় ছিলেন ১৪ বছর ৩২৮ দিন।
* ২০০৫ সাল থেকে একটানা ১৩ বছর জার্মানির ক্ষমতায় আছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল। ২০২১ সালে নির্বাচনের পর অবসরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে রেখেছেন তিনি।
* আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে একটানা ১২ বছর ৬ দিন দায়িত্ব পালনের পর এলেন জনসন সারলিফ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়েন।
আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের নারী রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে এই ছয়জনই একযুগের বেশি সময় সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন।