• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা বনাম অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ভোটযুদ্ধ কাল

প্রকাশ:  ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর। দেশ পরিচালনায় ক্ষমতায় কারা আসবেন তা জনরায়ে নির্ধারণ করতে পাঁচ বছর পর পর দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে আসছে। ১৯৯১ সাল থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কাঠামোয় দেশ পরিচালিত হয়ে আসলেও এর আগে ছিলো রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। ১৯৯১ সাল থেকে বর্তমান ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি এ দু’টি দলই পালাক্রমে এসেছে এবং পাঁচ বছর করে দেশ পরিচালনা করেছে। এই ২৮ বছরে বিএনপি-জামাত জোট দুইবার ছিলো রাষ্ট্রক্ষমতায় আর আওয়ামী লীগ ছিলো তিনবার। বিএনপি-জামাত জোটের দু’বারই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আর আওয়ামী লীগের তিনবারের রাষ্ট্রক্ষমতায় তিনবারই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সালে বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এরপরও আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সাথে কোয়ালিশন করে ‘জাতীয় ঐক্যমতের সরকার’ নামে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে। তবে একই বছর অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একদলীয়ভাবে নির্বাচন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলেও দুইমাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। তখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় বিএনপি। এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১২ জুনের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ।
    এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন বিএনপি ও জামাত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে, আর আওয়ামী লীগ করে এককভাবে নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অনিবার্যকারণে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় এবং একই সাথে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এককথায় অঘোষিত সেনাশাসিত সরকারের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। যেটি ওয়ান ইলেভেন ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকার নামে জনশ্রুতি রয়েছে। একনাগাড়ে প্রায় দুই বছর দেশে জরুরি অবস্থা থাকাবস্থায় ফখরুদ্দিন ও মঈন উদ্দিন সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিসহ সমমনা আরো কয়েকটি দল নিয়ে মহাজোট গঠন করে। আর বিএনপি জামাতকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করে। এ নির্বাচনে মূলত মহাজোট এবং চারদলীয় জোটের মধ্যেই ভোটযুদ্ধ হয়।
    ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সারাদেশে ২শ’ ৭০টি আসন পায় মহাজোট। আর বিএনপি-জামাত তথা চারদলীয় জোট পায় মাত্র ৩০টি আসন। সে নির্বাচনে চাঁদপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন ছাড়া অন্য চারটি আসন মহাজোট তথা আাওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ আরো কয়েকটি দলের এমপিদের নিয়ে ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি মহাজোট সরকারের মন্ত্রীপরিষদ গঠন হয়। এ দিন থেকে শুরু হয় মহাজোট সরকারের পথচলা। সে মন্ত্রীসভায় নানা চমকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি চমক হচ্ছে চাঁদপুর-৩ আসনে নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী আওয়ামী লীগের এমপি ডাঃ দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া। যা ছিলো শুধু বাংলাদেশই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কোনো নারীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর চাঁদপুরসহ সারাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়। ওই পাঁচ বছরে চাঁদপুর-হাইমচর নদী রক্ষা বাঁধ, দেড়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মেরিন একাডেমি, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ শত শত কোটি টাকার চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন কর্মকা- সম্পাদিত হয়।
    মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন বিএনপি-জামাত জোট বয়কট করে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ আরো কয়েকটি ছোটখাটো দল এ নির্বাচনে পৃথক পৃথকভাবে অংশ নেয়। তবে এ নির্বাচনে যেহেতু তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামাত অংশ নেয়নি, তাই সে নির্বাচন বলতে গেলে অনেকটা সমঝোতার ভিত্তিতে হয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে অনেকটা সমঝোতা হয়। সে আলোকে সারাদেশে তিনশ’ আসনের মধ্যে দেড়শ’ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। এ দেড়শ’টির মধ্যে চাঁদপুরের পাঁচটি আসনও রয়েছে। এ পাঁচটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
    ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের পথচলা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল এবং চৌকশ নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত হয়। যদিও বিএনপি-জামাত জোট ২০১৩ সালের শেষ দিকে থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত টানা অসহযোগ আন্দোলনসহ বিচ্ছিন্নভাবে হরতাল-অবরোধসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা আন্দোলন করেছিলো, কিন্তু সফলতার মুখ দেখেনি তারা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এ মেয়াদেও পাঁচ বছর পূর্ণ করে।
    এদিকে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ নামে ভিশন ২০২১-এর যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে, সে অনুযায়ী সরকার দেশ পরিচালনা করে। সে ভিশন বাস্তবায়নে ২০১৪ সাল থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে শুরু হয় আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনা। উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে দেশ এগুতে থাকে। বলতে গেলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠে। সারাদেশের সাথে চাঁদপুরের উন্নয়ন ও অগ্রগতিও অব্যাহত থাকে। এই দশ বছরে উন্নয়নে রেকর্ড ভঙ্গ করে। চাঁদপুর জেলায় হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। শুধু চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) নির্বাচনী এলাকায়ই হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন। আরো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক নৌবন্দর এবং সাড়ে দশ হাজার একর আয়তনে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য একটি উন্নয়ন হচ্ছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ। এ মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে, আগামী ১০ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ক্লাস শুরু হবে। এখন বাকি রয়েছে শুধু মেডিকেল কলেজের ভবন নির্মাণ।
    টানা দশ বছরের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগের জন্যে আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার নির্বাচন, আর বিএনপির জন্য হচ্ছে অস্তিত্ব রক্ষার নির্বাচন। অর্থাৎ ২০০৭ ও ২০০৮ সাল হচ্ছে বিএনপির জন্যে মহাবিপর্যয়ের দুই বছর। এরপর টানা দশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা। এসব মিলিয়ে বিএনপি সবদিক দিয়ে খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে জেলে, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান বিদেশে আত্মগোপনে, চাঁদপুরসহ প্রায় সারাদেশে বিএনপি অন্তঃকোন্দলে জর্জরিত। তার উপর আবার তাদের অন্যতম মিত্র জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে আদালত কর্তৃক চিহ্নিত হয়ে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়া দল। আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির প্রখ্যাত দুই কুটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী ও ড. ইমাম আহমেদ চৌধুরীর দল ত্যাগ করা। তাছাড়া চাঁদপুরের পাঁচটি আসনসহ দেশের আরো অনেক আসনে বিএনপি নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জর্জরিত। সবমিলিয়ে বিএনপির জন্যে মহাবিপর্যয় সময় যাচ্ছে। বলতে গেলে দলটি এখন অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে। তাই আগামীকালের নির্বাচন বিএনপির জন্যে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ, আর আওয়ামী লীগের হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে কোন্ জোট জয়ী হবে সেটি আগামীকাল রাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এরজন্যে অপেক্ষা করতে হবে দু’টি দিন।

 

সর্বাধিক পঠিত