নির্বাচনী শেষ জনসভায় চাঁদপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ডাঃ দীপু মনি
আমার এই মনের শক্তি একটি জায়গাতেই, তা হচ্ছে এই মানুষগুলোর ভালোবাসা
‘তাদের (বিএনপি-জামাত) আছে সম্পদ ও অর্থের দম্ভ, অস্ত্রের বাহাদুরী। আমার নেই কোনো সম্পদ, অর্থের প্রাচুর্য। নেই প্রাসাদ-অট্টালিকা। তবে আমি বিশ^াস করি, আমি তাদের চেয়ে অনেক বেশি সম্পদশালী। আমার সম্পদ হচ্ছে এই চাঁদপুরের মানুষ। কোটি টাকা দিয়ে এই সম্পদ কেনার শক্তি কারো নেই। এই সম্পদকে আগলে রেখেই তো আমি বেঁচে আছি। যতদিন বাঁচি আপনাদের সেবক হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমি আপনাদের সেবক হয়ে আপনাদের পাশে বাকি জীবন থাকতে চাই। চাঁদপুর-হাইমচরের এই মানুষগুলোর জন্যে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। সেই ভোর থেকে বের হয়ে সারাদিন মাঠ চষে বেড়াই। রাতে বাসায় ফিরে আবার সাধারণ মানুষ এবং দলের নেতা-কর্মীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক। বিশ^াস করুন, গভীর রাতে যখন বিছানায় যাই, তখন শরীরের প্রতিটি হাড্ডির মধ্যে ব্যথা অনুভব করি, মনে হয় একটি আঙ্গুল নাড়ানোরও শক্তি নেই। কিন্তু পরক্ষণেই যখন আমার এই প্রিয় মানুষগুলোর চেহারা ভেসে ওঠে, তাদের কথা ভাবি, তখন সকল ক্লান্তি, কষ্ট দূর হয়ে নব উদ্যমে বলীয়ান হয়ে আবার কাজ শুরু করি। আমার এই মনের শক্তি একটি জায়গাতেই, তা হচ্ছে এই মানুষগুলোর ভালোবাসা। তাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান আমি তাদের সেবক হওয়া ছাড়া অন্য কিছুতে দেখছি না। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে বিগত দশটি বছর আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামীতেও সে সুযোগ চাই। আপনাদের সেবক হয়ে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। তাই আগামী ৩০ ডিসেম্বর আপনারা (চাঁদপুর সদর ও হাইমচরের জনগণ) আমাকে নৌকা মার্কায় একটি করে ভোট দিয়ে পুনরায় আপনাদের সেবা করার সুযোগটুকু দেবেন।’
কথাগুলো মহীয়সী এক নারীর কান্নাজড়িত যাদুকরী কণ্ঠে ভেসে আসলো জনসমুদ্রে। মানুষের জন্যে মমত্ববোধ আর ভালোবাসার একি নিদর্শন! নিজে কাঁদলেন, অগণিত মানুষকেও কাঁদালেন। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে ধ্রুবতারার মতো আবির্ভাব হওয়া এই মহীয়সী নারী আর অন্য কেউ নন, চাঁদপুরের মাটির সন্তান ডাঃ দীপু মনি। রাজনীতির এই মহাকবি চাঁদপুরবাসীর সেবক হয়ে বেঁচে থাকতে চান। মানুষের জন্যে কাজ করতে পারাটাই পৃথিবীতে তাঁর সবচেয়ে বড় প্রশান্তির বিষয় এবং বড় প্রাপ্তি। আর এই পরীক্ষিত জনবান্ধব জনপ্রতিনিধি আগামী ৩০ ডিসেম্বর রোববার চাঁদপুর-হাইমচরবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করলেন। এ সময় অসংখ্য মানুষ সমস্বরে ‘নৌকা-নৌকা’ শ্লোগান ও করতালি দিয়ে মুখরিত করে তুললেন জনসভাস্থল হাসান আলী হাইস্কুল মাঠ।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ ডাঃ দীপু মনি। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর নির্বাচনী শেষ জনসভা করেছেন চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাইস্কুল মাঠে। বেলা আড়াইটায় এ জনসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বিকেল ৪টায় ডাঃ দীপু মনি সভামঞ্চে এসে উপস্থিত হন। তখন জনসভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। এরপরও মিছিলের পর মিছিল আসতে থাকে। পুরো হাসান আলী মাঠ ছাপিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সড়ক জুড়ে মানুষের ঢল দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের চাঁদপুর-৩ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আয়োজনে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। জনসভায় প্রধান অতিথি ডাঃ দীপু মনি ছাড়াও প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
ডাঃ দীপু মনি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, আমি চাঁদপুর-হাইমচরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতার পাশে বিশেষভাবে ঋণী। আমাকে আপনারা ২০০৮ সালে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বলে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন। মাননীয় নেত্রীর আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সফলতার সাথে পালন করতে সক্ষম হয়েছি আল্লাহর অশেষ রহমতে। আমি সৌদি আবর ও মালয়েশিয়াসহ আরো ক’টি দেশে যেসব অবৈধ বাঙালি ছিলো তাদের বৈধ পারমিট করে দিয়েছি সে সব দেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে আমরা সমুদ্রজয় করতে পেরেছি। এর দ্বারা বিশাল জলরাশিতে আমরা আরেকটি বাংলাদেশ পেয়েছি। সেখানে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের জন্যে আমি যে এসব কাজ করতে পেরেছি, এর কৃতিত্বের দাবিদার আপনারা। আপনারা আমাকে মহামূল্যবান ভোটটি দিয়েছেন বলে চাঁদপুরের উন্নয়নে এবং দেশের জন্যে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। দীপু মনি বলেন, আমার আগে ৩৫ বছরে তো এই আসনে আরো এমপি ছিলো। তারা আপনাদেরকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনাদের ভোট নিয়েছে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি। আর আমিও যদি বিএনপি-জামাতের এমপিদের মতো ওয়াদা না রাখতাম তাহলে আজ আপনাদের সামনে আসতে পারতাম না। নদী যদি বাঁধ দেয়া না হতো তাহলে নদী ভাঙতে ভাঙতে আজ কোথায় আসতো তা একটু অনুধাবন করুন। দীপু মনি বেশ দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, শেখ হাসিনার কর্মী। আমরা ওয়াদা রক্ষা করি। ডাঃ দীপু মনি গত দশ বছরে চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার যে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন কাজ করেছেন তার প্রধান প্রধান কয়েকটির বিবরণ তুলে ধরেন। এছাড়া সামনে আরো যেগুলো হবে যেমন মেডিকেল কলেজ ভবন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, হাইটেক পার্ক, পর্যটন অঞ্চল, আধুনিক নৌ বন্দর, ভাসমান হাসপাতাল ইত্যাদি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নাধীন। তাই এসব বাস্তবায়ন করতে হলে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসতে হবে, শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে হবে। ডাঃ দীপু মনি উপস্থিত জনতার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা ওয়াদার চেয়ে বেশি করেছি এ কথা কি ঠিক? তখন উপস্থিত জনতা হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। তখন দীপু মনি বলেন, আমি যদি ওয়াদা পালন করে থাকি তাহলে আপনাদের উপর আমার ভোটের অধিকার কি জন্মাইছে? তখনও সবাই হাত উঁচিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। দীপু মনি বলেন, চাঁদপুরকে সকলের মনের মতো করে তৈরি করবার ইচ্ছা রয়েছে। তার জন্যে প্রয়োজন আপনাদের ভোটের। বিএনপি-জামাত জোটের অপরাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা যতবার ক্ষমতায় ছিলো ততবারই শুধু লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। ২০১৪-১৫ সালে তারা আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এ আসনে তাদের তথাকথিত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর নেতৃত্বে আমার বাসায় হামলা হয়েছে। এর দ্বারা তারা তাদের সেই পুরানো হিং¯্র চেহারা জনগণকে দেখালো। তাদের নেত্রী এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় জেল খাটছে। আর এ মামলা কোনো আওয়ামী লীগ সরকার দেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ মামলা দিয়েছে। ডাঃ দীপু মনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, এ বাংলাদেশ কোনো আলোচনার টেবিলে পাওয়া বাংলাদেশ নয়। এ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ। যে যুদ্ধে লাখো বাঙালি প্রাণ দিয়েছে, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রামহানি হয়েছে। আর এ ডিসেম্বরেই বাঙালি বিজয় লাভ করে। সুতরাং এ বিজয়ের মাসে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামাত-বিএনপির বিজয় হতে পারে না। আরেকটি অবিস্মরণীয় বিজয় আমরা আগামী ৩০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাকে দিবো ইনশাআল্লাহ। কোনো ষড়যন্ত্র, বুলেট, বোমা, অপশক্তি আমাদের ঠেকাতে পারবে না। আমাদের আছে সততা, আছে ঈমানী শক্তি। সাথে আছে এই জনগণ। সকল ষড়যন্ত্র আর অপশক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব জনগণ ৩০ ডিসেম্বর দিবে। আমি আমাদের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলবো, ৩০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ছাড়া যাবে না। কেন্দ্র থেকেই বিজয়ের ফলাফল নিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুজিত রায় নন্দী বলেন, গত দশ বছরে চাঁদপুরে যে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে, তার জন্যে চাঁদপুরবাসী শেখ হাসিনাার কাছে ঋণী। ৩০ ডিসেম্বর আমরা নৌকায় ভোট দিয়ে কিছুটা হলেও ঋণ পরিশোধ করবো। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালি এ বিজয়ের মাসে হারাতে পরে না। ৩০ ডিসেম্বর দীপু মনিকে বিজয়ী করে চাঁদপুর-হাইমচরবাসী তা প্রমাণ করে দিবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, সাহির হোসেন পাটওয়ারী ও অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আলম মিল্টন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক আলী আরশ^াদ মিয়াজী, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ, সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল, হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতালেব জমাদার, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের জেলা সভাপতি অ্যাডঃ আহছান হাবীব, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলহাজ¦ মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এসএম জয়নাল আবেদীন, জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী ও কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াছ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতাউর রহমান পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক পারভেজ করিম বাবু প্রমুখ। এছাড়া জেলা, উপজেলা, পৌর, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও তাঁতীলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকবৃন্দ এবং সর্বস্তরের মানুষ জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি ও জাতীয় যুবসংহতির নেতা-কর্মীরাও নৌকা মার্কার মিছিল নিয়ে জনসভায় অংশ নেন। দুপুরের পর থেকে সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা নৌকার মিছিল নিয়ে আসতে থাকে জনসভায়। বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নৌকার মিছিলের শহরের পরিণত হয় চাঁদপুর। জনসভা শেষে ডাঃ দীপু মনির নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। সাথে ছিলেন সুজিত রায় নন্দীসহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।