ভিডিও কনফারেন্সে জেলাবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান
চাঁদপুরবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই
চাঁদপুরে চাঁদের হাট বসেছে, পূর্ণিমার আলোর মতো বিকশিত হোক
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চাঁদপুর জেলাবাসীর প্রতি অত্যন্ত আস্থা এবং বিশ^াসের সাথে জেলার প্রতিটি মানুষের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের দেখিয়ে তিনি তাঁদেরকে চাঁদের সাথে তুলনা করে বেশ উচ্ছ্বাসের সাথে বলেন, চাঁদপুরে চাঁদের হাট বসেছে, পূর্ণিমার আলোর মতো বিকশিত হোক। শেখ হাসিনা চাঁদপুরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে আপনারা নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিজয়ী করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ^াস। কারণ, ১৯৯৬ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছরে চাঁদপুর জেলায় আমরা কী কী উন্নয়ন করেছি তা দৃশ্যমান। তাই আমার দৃঢ় বিশ^াস, চাঁদপুরের জনগণ পাঁচটি আসনেই বিপুল ভোটে আমাদের বিজয়ী করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার বিকেলে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী ভিডিও কনফারেন্সে চাঁদপুরবাসীর উদ্দেশ্যে এ বক্তব্য রাখেন।
মূলতঃ এটি ছিলো শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভা। কয়েক মাস আগে যেহেতু তিনি চাঁদপুর সফর করেছেন, আর সেদিন হাইমচর ও চাঁদপুর শহরে বড় আকারের দুটি প্রোগ্রাম (স্টেডিয়ামে জনসভাসহ) করেছেন। তাই তিনি আর নির্বাচনকালীন সময়ে চাঁদপুর না এসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চাঁদপুরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। আর এটি ডিজিটাল বাংলাদেশেরই সুফল বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শেষ দিকে এসে চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। প্রার্থীরাও এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁদের প্রত্যেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে চাঁদপুরের পাঁচটি আসন তাঁকে উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। চাঁদপুরকে দু’হাত ভরে দেয়ার জন্যে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার পর তাঁর বক্তব্যের আগে ‘শেখ হাসিনার হাতে গত দশ বছরে বদলে যাওয়া চাঁদপুর’ শিরোনামে চাঁদপুরের প্রধান প্রধান কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে তৈরি ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে নৌকাকে কেউ হারাতে পারবে না। আমরা ১০ বছরে মানুষের জন্যে কাজ করেছি। দেশের মানুষ উন্নয়ন পেয়েছে। প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ ভালো আছে। আমরা গত ১০ বছরে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ, বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা জঙ্গিবাদ দমন ও সন্ত্রাস দূর করেছি। আমরা দারিদ্র বিমোচন করে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্যে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের জন্যে ব্যাপক উন্নয়ন আমরা করছি। প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষ ভালো আছে। তাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আগামীতে আরও ভালো থাকতে এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়তে নৌকার বিজয়ের বিকল্প নেই। বিজয়ের এই মাসে চাঁদপুরবাসীর কাছে আমার আবেদন ৩০ ডিসেম্বর নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীন একটা দেশ দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শুধু উন্নয়ন বাস্তবায়নই করছি না, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি। আমরা ২০১০ থেকে ২০২১ এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছি। পাশাপাশি ডেল্টা প্ল্যান তথা একশ’ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। উদ্দেশ্য হচ্ছেÑপ্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যেনো সুন্দর জীবন পায়। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যে দল তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করে। গত নির্বাচনে আমরা যে ইশতেহার দিয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ আমরা করতে পেরেছি। কোনো কোনো মানুষ আছেন তারা আমাদের উন্নয়ন দেখেন না। সমালোচনা করতে হবে তাই তারা দেখেও দেখেন না। তবে আমাদের প্রার্থীরা আছেন, নেতা-কর্মীরা আছেন, আমাদের সাথে জনগণ আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সন্ত্রাসে বিশ^াস করে। তারা হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে। তারাও জানে আমাদের এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের মানুষ আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিবে। তাদের সন্ত্রাস-দুর্নীতি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা, মানি লন্ডারিং করা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ নানা অপকর্মের কারণে এদেশের মানুষ আর বিএনপি-জামাতকে চায় না। এটা জেনেই তারা নির্বাচনে সন্ত্রাস-হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সকলকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের আর কয়েকটা দিন বাকি। উস্কানি ও সন্ত্রাস করাই ওদের চরিত্র। আমাদেরকে খুব ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা যেহেতু নির্বাচনে জয়লাভ করে আবার সরকার গঠন করবো, দেশের মানুষের সেবা করবো, সেহেতু আমাদেরকেই ধৈর্য্য ধরতে হবে যাতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা হয়। কোনোভাবে তারা যেনো নির্বাচন বানচাল করতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে আসার আগে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনের নৌকার প্রার্থী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ ও উত্তর) আসনের প্রার্থী আলহাজ¦ মোঃ নুরুল আমিন রুহুল, চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনের প্রার্থী আলহাজ¦ ডাঃ দীপু মনি, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি) আসনের প্রার্থী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।
আরো বক্তব্য রাখেন ফরিদগঞ্জ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডঃ নুরজাহান বেগম মুক্তা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু নাছের বাচ্চু পাটওয়ারী এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মাসুদ আলম মিল্টন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ, হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, হাজীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহমদ খসরু, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী, শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদ উল্লা চৌধুরী, হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটওয়ারী, মতলব দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচএম গিয়াস উদ্দিন, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডঃ রুহুল আমিন, কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ূব আলী পাটওয়ারী।
উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডঃ নির্মল গোস্বামী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ওচমান গনি পাটওয়ারি, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, বিল্লাল হোসেন আখন্দ, আবদুর রশিদ সর্দার, ইঞ্জিঃ আঃ রব ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ আখন্দ, অ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, শাহীর হোসেন পাটওয়ারী, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মন্জুর আহমেদসহ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, নেতৃবৃন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ। এ অনুষ্ঠানে চাঁদপুর সদর ও হাইমচর ছাড়াও কয়েকটি উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ