চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ঘনকুয়াশার কারণে অর্ধশতাধিক লঞ্চ আটকা পড়েছে
মেঘনায় যাত্রীবাহী লঞ্চের সাথে বাল্কহেডের সংঘর্ষ : তলা ফেটে ৫শ’ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চরে আটকা
যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের পর উদ্ধার
চাঁদপুর জেলাধীন মতলব উত্তর এলাকার মোহনপুরের নিকটবর্তী কাচিকাটারচর এলাকায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি পারাবাত-১৫-এর সাথে বাল্কহেডের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে লঞ্চটির তলা ফেটে গেলেও চরে উঠিয়ে দেয়ায় রক্ষা পায়। লঞ্চটি ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে সন্ধ্যায় ছেড়ে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টির কাছে আসলে বাল্কহেডের সাথে সংঘর্ষে তলদেশ ফেটে ছিদ্র হয়ে যায়। তারপরও চালক লঞ্চটিকে নিরাপদে না নিয়ে যাত্রীদের জীবনের দিক চিন্তা না করে চালিয়ে চাঁদপুর মোহনপুর এলাকায় চলে আসে। হঠাৎ লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে এবং যাত্রীরা রাতে লঞ্চের তলদেশ ফেটে গেছে এ খবর শুনে ভিতরে ছোটাছুটি করতে গেলে কমপক্ষে ২৫/৩০ জন যাত্রী কম-বেশি আহত হয়েছে বলে লঞ্চের মাস্টার হারিছ উদ্দিন জানান। কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে নদীতে লাফিয়ে পড়ে। তবে কেউ নিখোঁজ রয়েছে কিনা তা’ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। কয়েকজন যাত্রী জানান, যারা ভয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়েছে, তাদের মধ্যে কেউ নিখোঁজ থাকতে পারে। লঞ্চের ভিতরে পানি ঢুকে পড়ায় প্রায় ৪শ’ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি মেঘনার চরে আটকা পড়ে। যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের প্রায় ১২ ঘন্টা পর জোয়ারের সময় শুক্রবার দুপুরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় অন্য লঞ্চের সাহায্যে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি পারাবাত-১৫কে টেনে নদীতে নামিয়ে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়া চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ঘনকুয়াশার কারণে প্রায় অর্ধশত যাত্রীবাহী লঞ্চ ও বিভিন্ন নৌ-যান মেঘনা ও পদ্মা নদীর বিভিন্নস্থানে আটকা পড়ে। প্রতিটি লঞ্চ বৃহস্পতিবার রাত ১টা হতে ২টায় চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে পৌঁছার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ৭/৮ ঘন্টা বিলম্বে শুক্রবার সকাল ৯টা হতে ১০টায় এসে পৌঁছে।
বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত অনুমান ১২টার দিকে মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় ঢাকা-মাদারীপুর রুটের এই লঞ্চটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। খবর পেয়ে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ, মোহনপুর ফাঁড়ির পুলিশ ও কোস্টগার্ড রাতে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়। এ ঘটনায় শীতে, বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের অভাবে মহিলা-শিশুরা বেশি দুর্ভোগে পড়েছে বলে যাত্রীরা জানান। তবে এ ঘটনায় আহতদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর নৌ-পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মাদারীপুরগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি পারাবাত-১৫ ঘটনাস্থলে আসলে ঘনকুয়াশার কারণে বাল্কহেডের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লঞ্চটির তলায় ছিদ্র হলে পানি প্রবেশ করে এবং যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে লঞ্চটি কাচিকাটার চরে ভিড়িয়ে দেয় লঞ্চের মাস্টার।
চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রেজাউল করিম ভূঁইয়া পিপিএম জানান, লঞ্চে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারে ব্যাপক নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। রাতেই ঘটনাস্থলে পরিদর্শনের জন্য পুলিশ যায় এবং নৌ-পুলিশ, মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ।
মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ আবু তাহের জানান, প্রায় ৪শ’ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ঢাকা থেকে সন্ধ্যায় মাদারীপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনার চরে লঞ্চটি তলা ফেটে যাওয়ায় আটকে যায়। এদিকে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় অর্ধশত যাত্রীবাহী লঞ্চ ও বিভিন্ন নৌ-যান মেঘনা ও পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে। প্রতিটি লঞ্চ নির্ধারিত সময়ের ৭/৮ ঘন্টা বিলম্বে চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে পৌঁছেছে।