নিজ ইউনিয়ন রামপুরে মহাজোট প্রার্থীর দিনব্যাপী গণসংযোগ ও উঠোন বৈঠক
আপনাদের মেয়ের তো কোনো বদনাম নেই, তাহলে দলমত নির্বিশেষে সকলের ভোট আশা করছি : ডাঃ দীপু মনি এমপি
৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে নিজ ইউনিয়ন চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুরে ব্যাপক গণসংযোগ এবং ডজনখানেক উঠোন বৈঠক ও মহিলা সমাবেশ করেছেন চাঁদপুর-৩ আসনে মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ দীপু মনি এমপি। এদিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত একটানা তিনি নির্বাচনী এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। প্রতিটি উঠোন বৈঠক ও মহিলা সমাবেশে ডাঃ দীপু মনি পুরো রামপুর ইউনিয়নবাসীর কাছে তাদের মেয়ের দাবি নিয়ে ভোট চেয়েছেন। বাবার বাড়িতে মেয়ের আবদারের কথা বলতে গিয়ে তিনি অনেক সময় আবেগাপ্লুত হয়ে গেছেন। আর বাড়ির চাচা, চাচীসহ স্বজনদের কাছে পেয়ে দীপু মনি তাঁদের সাথে প্রাণ খুলে কথা বলেছেন, দোয়া চেয়েছেন। আর বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয় স্বজনরাও দীপু মনিকে আদর, ¯েœহ ও মমতা দিয়ে আশ^স্ত করেছেন ২০০৮ সালের চেয়েও এবার অনেক বেশি ভোট দিয়ে তাদের মেয়ে, তাদের গর্ব-অহঙ্কার দীপু মনিকে নির্বাচিত করবেন।
দীপু মনি প্রতিটি উঠোন বৈঠক ও মহিলা সমাবেশে বর্তমান সরকারের টানা দশ বছরে তিনি এই রামপুর ইউনিয়নে কী কী উন্নয়ন করেছেন তার বিবরণ তুলে ধরেছেন। এই ইউনিয়নে গত দশ বছরে তিনি মোট প্রায় ৮০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলোর বিবরণ তিনি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে-মধুরোড স্টেশনকে রি-মডেলিংয়ের মাধ্যমে আধুনিকায়ন ও ডাবল রেল লাইন নির্মাণ করা, কামরাঙ্গা স্কুলকে কলেজে রূপান্তরিত করে সেখানে চারতলা ভবন নির্মাণ, কামরাঙ্গা ফাযিল মাদ্রাসায় চারতলা ভবন নির্মাণ, রামপুর আদর্শ আলিম মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণ, ছোট সুন্দর এ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ, মনিহার দাখিল মাদ্রাসায় নতুন ভবন, ছোটসুন্দর আল-আমিন সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসায় নতুন ভবন এবং ইউনিয়নে প্রায় ২৮ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ। এছাড়া মনিহার জিএম ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন চারতলা ভিত বিশিষ্ট নতুন ভবন অনুমোদন, সহসাই যার কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর ফরিদগঞ্জের ইসলামপুর থেকে সদরের রামপুর বগার গুদাড়া পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর উপর ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতু নির্মাণের কাজও শেষ প্রায়। সহসাই এটি চালু হবে। এটি হয়ে গেলে ফরিদগঞ্জের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ হয়ে যাবে। এটি দুই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো। এছাড়া চাঁদপুর সদর ও হাইমচরের বড় বড় উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরেন সাবেক এই পরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর জাতীয়ভাবে শেখ হাসিনার সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নে দেশের জনগণের জীবনমান উন্নত হওয়ার বিষয়ও ডাঃ দীপু মনি তুলে ধরেন।
ডাঃ দীপু মনি রামপুর ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমার এই বাপের বাড়ির মানুষগুলো আমাকে বঞ্চিত করেননি। তাঁরা তাদের মেয়েকে সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়েছেন। শুধু আমার দলের নয়, অন্য দলের মানুষও আমাকে তাদের এলাকার মেয়ে হিসেবে ভোট দিয়েছে। এ জন্যে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এমনিভাবে আমার নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র দলমত নির্বিশেষে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমাকে এমপি নির্বাচিত করায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছেন। আর এ সুবাদে আমি যেমনি এলাকার শত বছরের সমস্যা ও দুঃখ দূর করে রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন করেছি, তেমনি সমুদ্র বিজয় হতে শুরু করে আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও তাঁর দিক নির্দেশনায় কাজ করেছি, ভূমিকা রেখেছি। তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যখন ২০০৮ সালে আমাকে ভোট দিয়েছেন, তখন তো এলাকার মেয়ে হিসেবে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই হয়ত এ চিন্তা করেননি যে, আমি এমপি হলে এতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হবো এবং এতো উন্নয়ন করতে পারবো। শুধু মন্ত্রী থাকাকালীনই নয়, পরবর্তী পাঁচ বছরেও মন্ত্রী না থেকে আমি রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরের জন্যে যা চেয়েছি, তাই দিয়েছেন, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দিয়েছেন। কারণ, ৩৫ বছর পর এ আসনটি আমার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরে পেয়েছে। তার প্রতিদান এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দশ বছরে দু’হাত ভরে চাঁদপুরকে দিয়েছেন।
দীপু মনি এতোসব উন্নয়নের কথা বলার পর উপস্থিত জনগণের কাছে জানতে চান, আপনারা তো এই দশ বছর আমাকে দেখেছেন, চিনেছেন এবং উন্নয়ন দেখেছেন। তাহলে আপনাদের এই মেয়ের কি কোনো বদনাম আছে? তখন সমস্বরে সকলে বলে উঠেন, না না। এরপর দীপু মনি বলেন, আপনাদের মেয়ের যেহেতু কোনো বদনাম নেই, তাহলে তো পুরো রামপুর ইউনিয়নের দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের ভোট প্রত্যাশা করতে পারি। তখন উপস্থিত সকলে সমস্বরে তাঁকে ভোট দেয়ার ওয়াদা করেন।
ডাঃ দীপু মনি রোববার বেলা ১২ টায় দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উঠোন বৈঠক দিয়ে এদিনকার তাঁর নির্বাচনী কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে মধুরোড রেল স্টেশন সংলগ্ন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, আলগী পাঁচগাঁও সকদী পল্লী শিশু একাডেমী মাঠ, আলগী তপাদার বাড়ির সামনে, ছোট সুন্দর এ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, উত্তর বড় সুন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, দক্ষিণ রামপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা, রাঢ়িরচর চৌরাস্তা সংলগ্ন বালুর মাঠ, কামরাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাঙ্গণ ও মনিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উঠোন বৈঠক করেন এবং চান্দেরবাগ দাসের বাড়ি কীর্ত্তন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এসব অনুষ্ঠানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। দিনব্যাপী এসব অনুষ্ঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এবং যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সার্বিক সহায়তায় অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল-মামুন পাটওয়ারী। এসব অনুষ্ঠান ছাড়াও ডাঃ দীপু মনি রামপুর পীর বাড়ি মাওঃ ওয়াজউদ্দিন (রঃ) ও ফজলুর রহমান আনোয়ারী (রঃ)-এর মাজার জিয়ারতসহ আরো কিছু বুজুর্গের মাজার জিয়ারত করেন।
এসব অনুষ্ঠানে ডাঃ দীপু মনির সফরসঙ্গীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক আলী আরশাদ মিয়াজী এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন রামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন জাকির, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবিএম রেজওয়ান ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন মোল্লা।
উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা কামাল পাটওয়ারী, সিনিয়র সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন পাটওয়ারী, সহ-সভাপতি সাহাদাত হোসেন পাটওয়ারী, জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা হারুনুর রশিদ হাওলাদার, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল মুন্না, রামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আহসান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক মহসিন খান, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-আমিন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মজুমদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।