• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আসন বন্টনে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত : গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড়

প্রকাশ:  ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ১০:১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের আসন বন্টন নিয়ে জটিলতার অবসান হয়নি। ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী জোটে নতুন করে যুক্তফ্রন্ট ও বেশকিছু ইসলামিক দল যোগ হওয়ায় আসন বন্টনের জট বেড়েছে। আসন বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন মহাজোটের শরিকরা। আবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভিড় করছেন গণভবনে।

আওয়ামী লীগে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড়ের কারণে মহাজোটের নেতাদের সঙ্গে বসতে সময় করে উঠতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রোববারের মধ্যে মহাজোটের নেতাদের নিয়ে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি। এরই মধ্যে সভাপতির নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহাজোটের শরীক দলগুলোর শীর্ষনেতাদের সঙ্গে আসন বন্টর নিয়ে বৈঠক করেছেন। এরই অংশ হিসেবে আজ শনিবার জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে বৈঠক করবেন অাওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টির প্রত্যাশা ৬০টি আসন, কিন্তু এখনো ৩০টি আসনেই অনড় আওয়ামী লীগ। দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক বিষয়টি আজ চুড়ান্ত না হলে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়বে।

এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী মহাজোটের শরিক ইসলামিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারামধ্যে গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। ভোটের মাঠে ইসলামিক দলগুলোর বেশ প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। কমপক্ষে ১০ আসন ইসলামিক দলগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এই নির্বাচনে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি সব দলকে নিয়েই জোট করতে চায় আওয়ামী লীগ। যুক্তফ্রন্ট তথা বিকল্পধারা নেতারাও গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তাদের প্রত্যাশিত আসনের তালিকা দিয়ে এসেছে। যুক্তফ্রন্টের ন্যুনতম চাওয়া ১৫টি আসনের জায়গায় ক্ষমতাসীন দল ৫টি আসন বরাদ্দের কথা ভাবছে।

অাওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের সঙ্গে আসন বন্টনে কিছুটা পরিবর্তন আসছে। যুক্তফ্রন্ট ও ইসলামিক দলগুলো বেশকিছু আসন পাবে। অন্যদিকে প্রত্যাশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম আসন পাবে জাতীয় পার্টি ও ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা। এর মধ্যে ১৪-দলীয় জোটের পাঁচ শরিক দলের গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় গণআজাদী লীগ, বাসদ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও গণতন্ত্রী পার্টি থেকে কেউ মনোনয়ন পাবে না। তবে পরবর্তী সময় তাদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা ভাবা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

শরীক দলগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, তাদের পাঁচ আসন ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন (ঢাকা-৮), সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা (রাজশাহী-২), মোস্তফা লুৎফুল্লাহ (সাতক্ষীরা-১), ইয়াসিন আলী (ঠাকুরগাঁও-৩) ও টিপু সুলতান (বরিশাল-৩)। ১৪ দলের আরেক শরিক জাসদের (ইনু) বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জাসদ ভেঙে যাওয়ার পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদে এমপি আছেন তিনজন। তবে তাদের মধ্যে হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের বিষয়টি চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। জাসদের অন্য অংশের সংসদ সদস্য আছেন দুজন, মঈনুদ্দিন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮) ও নাজমুল হক প্রধান (পঞ্চগড়-১)। তাছাড়া নড়াইল-১ আসন থেকে জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন। সাম্যবাদী দলের পক্ষ থেকে একটি আসন চাওয়া হয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া সাম্যবাদী দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চান। তরিকত ফেডারেশনে দুজন সংসদ সদস্য ছিলেন। দলটির মহাসচিব এমএ আউয়ালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাই এবার তরিকত ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দলটির চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মনোনয়ন পাবেন। জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) থেকে। দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছাড়া অন্যকেউ মনোনয়ন পাবে না বলে জানা গেছে।

এদিকে শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণভবন ঘিরে উপচে পড়া। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে তার সরকারি বাসভবনে ভিড় করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলা আসা মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। এমনকি মনোনয়নের দাবিতে গণভবনের সামরেন মানববন্ধনের ঘটনাও ঘটেছে। যশোর-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. জেসমিন আরাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে ওই আসনের প্রায় পাঁচশ মানুষ গণভবনের সামনে মানববন্ধন করে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ছিলেন গণভবনের সামনে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যানারে গণভবনের সামনে মানববন্ধন হয়েছে।

 

শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দিনভর গণভবনে ছিল লম্বা লাইন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দেখা পাননি প্রধানমন্ত্রীর। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চাপে সন্ধ্যায় ঠিকমতো নেতাদের সঙ্গে বসে কথা বলতে পারছেন না শেখ হাসিনা। সে কারণে গত শুক্রবার থেকে গণভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসেন গণভবনে। ওইদিন ১৪-দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আসন বণ্টন সংক্রান্ত আলোচনায় বসার কথা ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চাপে আর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়নি।

গণভবন সূত্রে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন পাবেন না বলে নিশ্চিত হয়েছেন এমন অনেক নেতাই প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে গিয়ে দেখা করছেন শুক্রবার। শেখ হাসিনা তাদের বেশ কয়েকজনের কিছুক্ষণ করে সময় দিয়েছেন। তিনি তাদের কথা দিয়েছেন দল ক্ষমতায় এলে তার আসনের দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে পারলে মনোনয়নবঞ্চিতদের সরকার ও দলে মূল্যায়ন করবেন। দলের দু-একজন সিনিয়র নেতা যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন না, তাদের মন্ত্রিসভার সদস্য করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।