রাজরাজেশ্বর ইউপি সদস্যের বাড়ি থেকে সাড়ে ৭শ’ মণ মা ইলিশ জব্দ
জেলা টাস্কফোর্সের সদস্যের ওপর হামলা ॥ পুলিশের ৪০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ
প্রায় ৭৫০ মণ ইলিশ জব্দ করেছে জেলা টাস্কফোর্স। শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর মেম্বার নামে এক জনপ্রতিনিধির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাছগুলো জব্দ করা হয়। অভিযান চালানোর সময় টাস্কফোর্সের সদস্যদের উপর হামলা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অন্তত ৪০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
গোপন সূত্রের মাধ্যমে খবর পাওয়া যায় যে, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের বন্দুকশীকান্দি গ্রামে জাহাঙ্গীর মেম্বারের বাড়িতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স সদস্যরা শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় অবৈধভাবে মা ইলিশ সংরক্ষণকারীরা টাস্কফোর্স সদস্যদের উপর হামলা চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ৪০ রাউন্ড গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে জাহাঙ্গীর মেম্বারের বাড়ির দুটি গোয়ালঘরে রক্ষিত প্রায় ৭শ’ ৫০ মণ ইলিশ জব্দ করা হয়।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সেখানে রক্ষিত গোয়ালঘর থেকে মাছগুলো জব্দ করেছি। জব্দকৃত ইলিশের মধ্য থেকে প্রায় ২৫০ মণ চাঁদপুরে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে আরও ৫০০ মণেরও বেশি ইলিশ রয়েছে। ওই ইলিশগুলো রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলীসহ স্থানীয় ৫ জনের জিম্মায় রাখা হয়েছে। আজ শনিবার মাছগুলো চাঁদপুরে নিয়ে আসা হবে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, অভিযান চালাতে গেলে সেখানকার অসাধু লোকজন আমাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় প্রায় ৪০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি জানান, জব্দকৃত ইলিশের মধ্য থেকে কিছু ইলিশ চাঁদপুরে নিয়ে আসা হয়েছে। বাকি ইলিশগুলো সেখানে সীলগালা করে রাখা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহার শম্পা ও কোস্টগার্ড কমান্ডার এনায়েতুল্লাহ জানান, মা ইলিশ রক্ষায় সরকার নদীতে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে ও স্থানীয় প্রভাবশালী নদীতে মা ইলিশ শিকার করে সংরক্ষণ করছে। মা ইলিশ রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় এ অভিযান। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান জানান, মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আর মাত্র দুদিন বাকি আছে। এ অবস্থায় জেলেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের প্রশাসনের সকল সদস্য মা ইলিশ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ইলিশ রক্ষায় আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের মেঘনার চর রাজরাজেশ্বরসহ বিভিন্ন চরে এবং নদীর পাড়বেষ্টিত গ্রামগুলোতে একটি চক্র ঢাকা থেকে বরফ এনে বিপুল পরিমাণ ইলিশ সংরক্ষণ করছে। যার এক একটি অংশ জেলা টাস্কফোর্স জব্দ করতে সক্ষম হয়। রাজরাজেশ্বর চরে আরো ইলিশ মজুদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া চাঁদপুর সদরের পুরাণবাজার রণাগোয়াল, দোকানঘর, রামদাসদী খালপাড়, সাখুয়া খাল, নদীর পাড়, বহরিয়া খালের ব্রীজ, লক্ষ্মীপুর, নন্দেশখার খাল, রাঢ়িগোখাল, নন্দীদোকান, গোবিন্দিয়া বেড়িবাঁধের টেক, পশ্চিম বাখরপুর, ইব্রাহীমপুর চর, হাইমচরের মাঝের চর, ঈশানবালা, মণিপুর চর, চরভৈরবী, মতলবের বাহেরচর, শরীয়তপুরের আফামোল্লা, চেয়ারমান স্টেশন চর, কাঁচিকাটা, দুলারচর, সুরেশ্বরসহ পদ্মা-মেঘনার এসব এলাকায় এবার নিষেধাজ্ঞার সময় অবাধে মা ইলিশ নিধন হয়েছে। সেই এলাকার নদীবেষ্টিত গ্রামগুলো ইলিশে সয়লাব ছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। বিপুল পরিমাণ ইলিশ মজুদ করে রাখারও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, জেলে নামধারী একশ্রেণির দুর্বৃত্ত দ্রুতগতির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনের নৌকা ব্যবহার করে দিন-রাত নদীতে নেমে ইলিশ আহরণ করেছে। নদীর পাড়ের চিহ্নত কতিপয় আড়তদার তাদের নদীতে নামায়। অভিযানের প্রতিটা দিন সন্ধ্যায় এবং ভোরবেলায় ইলিশ বেচা-কেনার হাট বসে।