• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যথাসময়ে নির্বাচন

গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ:  ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৭ | আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০২:০১
চাঁদপুর পোস্ট ডেস্ক
প্রিন্ট
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, তফসিল অনুযায়ী দেশে অবশ্যই নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন সঠিক সময়ে এবং সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন নিয়ে যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলার ক্ষমতা সরকার ও আওয়ামী লীগের রয়েছে। তবে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বানচালের নামে আবারো অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার চেষ্টা করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি আরো বলেন, যতক্ষণ বেঁচে আছি দেশের মানুষকে আর আন্দোলনের নামে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার হতে দেব না।  সোমবার বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি সৌদি আরব সফরের অর্জন ও সফলতা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যের পর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাস্যোজ্বলভাবেই প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা ছোট না করার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবগুলো মন্ত্রণালয়ের অধীনেই অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। মন্ত্রিসভা ছোটো করলে সে কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। তিনি চান উন্নয়ন কাজ যেন একদিনের জন্যও থেমে না থাকে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের বেশি বাকি নেই। কাকে যে ছোটো করবো সেটাতো খুঁজে পাচ্ছি না।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনী, স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গিবাদ, জাতির পিতার খুনি, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলাকারী, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নরা মিলে ঐক্য করেছে। এখানে স্বার্থ ছাড়া তো রাজনীতি নেই। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমে তারা ৫ দফা দাবি দিলো। পরে আবার হলো সাত দফা। আগামী নির্বাচনের আগে তাদের দাবি মোট কত দফায় দাঁড়ায় তা আগে দেখি। আর সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য আমরা কোনো চিঠি পাইনি। ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. কামাল হোসেন কার সঙ্গে ঐক্য করেছেন? ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও মানিলন্ডারিং মামলার দণ্ডিত আসামি যে দলটির নেতৃত্ব দেয় (বিএনপি), সেই দলের নেতৃত্ব মেনে তিনি ঐক্য করেছেন। যিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার নামে এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলা দিয়েছিলেন, তিনিও এই ঐক্যে রয়েছে। ড. কামাল হোসেন যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার-আলবদর-আলশামস, যারা (বিএনপি-জামায়াত) পুড়িয়ে পুড়িয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে এক হয়েছেন। খুনি, দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী, জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তিনি ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এখানে রাজনীতি কোথায়? এটা স্বার্থান্বেষীদের নিয়ে এই ঐক্য।  তিনি আরো বলেন, ড. কামাল হোসেন যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, সেই কামাল হোসেনই ৭২-এর সংবিধান নিয়ে আপত্তি আছে বলে জানিয়েছেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধীনভাবে। এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচনের প্রাক্কালে নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের চিরাচরিত বিষয়। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কম হয়নি। কিন্তু সবকিছু মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যেতে পারছি।
 
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। সকলেরই স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার অধিকার আছে। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আছে, কথা বলারও স্বাধীনতা আছে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।  শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এক হয়েছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। তারা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা) সেখানে যুক্ত হয়েছেন, তারা কেমন? দেশের মেয়েদের প্রতি কেমন মনোভাব সেটাও সবাই দেখেছেন। ঐক্যফ্রন্টে এ গাছের ছাল ও গাছের বাকল যোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে না।
 
একজন নারী সাংবাদিক সম্পর্কে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মইনুল হোসেন যুক্তরাজ্যে বার-এট-ল পড়তে গিয়ে ইংরেজদের খাবার খাওয়া শিখলেও ইংরেজদের মতো ভদ্রতা ও ভাষা শিখতে পারেননি। ইংরেজ খাবার ছাড়া তিনি খেতে পারতেন না। একজন নারী সাংবাদিককে তিনি যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন তা অত্যন্ত জঘন্য। তার বাচনিক ভঙ্গি, অ্যাটিচিউড সবই খারাপ। তার কাছে মানুষ কী আশা করবে? তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক যে দল করেছিল, সেই দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। উনি কিন্তু পরে একটা দলও করেছিলেন। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি যারা, তাদের নিয়ে তিনি দল করেছিলেন।
 
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করল। কিন্তু এই আন্দোলন হওয়ার পরও তো মানুষ সচেতন হয়নি। এখনো চলন্ত গাড়ির ফাঁক-ফোকার দিয়ে লোকজন পারাপার হচ্ছেন। ফুটপাত আছে, আন্ডারপাস আছে, ফুটওভার ব্রিজ আছে। কিন্তু দেখা গেল স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে মায়েরা গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। অনেকে ড্রাইভারদের দোষ দেন। পরিবহন নেতাদের পিটুনি দিলেই কী চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে লোক দৌড় মারা বন্ধ হয়ে যাবে? সড়ক আইন পাশ করেছি। সবকিছু করেছি। দেশবাসীকেও বলবো, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, পারাপারের সময় আইন মেনে চলুন। সময়ের যেমন দাম আছে, জীবনেরও তেমন মূল্য আছে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকবে।’
 
বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের নবধারা সূচিত হবে
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরকে অত্যন্ত সফল আখ্যায়িত করে লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের নবধারা সূচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহ এবং সৌদি আরবে অবস্থিত দুই পবিত্র মসজিদের জিম্মাদার সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদ-এর আমন্ত্রণে ১৬-১৯ অক্টোবর সৌদি আরবে ৪ দিনের সরকারি সফর করেন। সফরকালে বিনিয়োগ সংক্রান্ত দুই দেশের মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে সিমেন্ট কারখানা, ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা, সৌদি-বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, সৌরবিদ্যুত্ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উত্পাদন কারখানা স্থাপন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে ইতিপূর্বে উচ্চপর্যায়ের সফরগুলোতে সেদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি প্রাধান্য পেত। কিন্তু এবারের সফরে গতানুগতিক ধারার বাইরে অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষায় কার্যকর অংশিদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, মুসলিম বিশ্বে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতামূলক তত্পরতা বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়।’
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শুরুতেই বাদশাহ আমাকে স্বাগত জানান। তিনি সৌদি আরবকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এখানে আপনি সব সময়ের জন্য স্বাগত।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভূতপূর্ব গতি সঞ্চারিত হওয়ায় বাদশাহ সন্তোষ প্রকাশ করেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি বাদশাহ আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। বাদশাহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা রক্ষায় আগামীতে আমাদের সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।’
 
শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি বাদশাহকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন এবং নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। যুবরাজ বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং দু’মাসের মধ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠাবেন বলে জানান।
 
সাংবাদিক সম্মেলনে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী সভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, দলের কেন্দ্রীয় নেতা, এমপিসহ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
 

সূত্র : ইত্তেফাক (http://www.ittefaq.com.bd/national/2018/10/23/175603.html)