উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় শিক্ষকদের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই, যাতে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চলমান গতি বজায় থাকে এবং আমাদের শুরু করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো শেষ করা যায়। কারণ, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণে আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল।’
শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন (এফবিইউটিএ) আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে হয়তো নির্বাচিত হয়ে আসব। আর যদি নাও দেয় তাহলেও কোন আফসোস থাকবে না। কারণ, বাংলাদেশে উন্নয়নের যে ধারাটা আমরা শুরু করেছি সেটা যেন অব্যাহত থাকে তা আপনারাই নিশ্চিত করবেন, সেটাই আমি চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার একটা লক্ষ্যই ছিল টানা দুই মেয়াদে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারে তবে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হবে, যেমনটি নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তারপরেও সামনে যেহেতু নির্বাচন এবং নির্বাচনে সকলেই যেমন ভোট চায়, আমরাও ভোট চাই। যাতে করে আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে।’
৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করায় তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এখন যে পাচ্ছে, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা যে বেড়েছে, সেটা ধরে রাখতে হবে। কাজেই বাংলাদেশের জনগণ যদি মনে করে, উন্নয়নের এই ধারা ধরে রাখতে হবে- আমি আশা করি, হয়তো তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের আবার সেবা করার সুযোগ দেবে।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
এফবিইউটিএর সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবায়তুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
দেশের শিক্ষা সম্প্রসারণে বর্তমান সরকারের উদ্যোগসমুহ নিয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে এগিয়ে নিতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শিক্ষক, আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর। আপনাদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। অবশ্যই আপনারা এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কাজেই আপনাদের হাতে দেশের ভবিষ্যত রয়েছে, জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ার কারিগর সোনার ছেলে-মেয়েদেরকে আপনারাই গড়ে তুলবেন।’
শেখ হাসিনা শিক্ষার প্রসার এবং শিক্ষকদের কল্যাণে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারলে তাদের বিভিন্ন দাবি পূরণের ইঙ্গিত দেন এবং তাদের দাবিগুলো লিখিত আকারে তার কাছে দেওয়ারও পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান স্মরণ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নেরও তাগিদ দেন।
তিনি এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বেশি না বাড়িয়ে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, যাতে বিভিন্ন এলাকার ছেলে-মেয়েরা ঘরে বসেই লেখাপড়া করতে পারে, সে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত রাখায় তার সরকারের অঙ্গীকারের উল্লেখ করে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, সেটা করতে হলে শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকলে মিলেই করতে হবে, সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হবে না, সমগ্র সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় নিয়ে আসার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ১৪/১৫ লাখ ছেলে-মেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষায় সম্পৃক্ত, তারাও যেন উচ্চশিক্ষা পায়, তারাও যেন ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মতো মানুষ হয়ে নিজেদেরকে কর্মপোযোগী করে গড়ে তুলতে পারে, সেটাও আমরা ব্যবস্থা করেছি।
আগামীর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাবে, এ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনরকম সাম্পদায়িকতা যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আমাদের ১৫১টা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে ৪৮টা পাবলিক ও ১০৩টা প্রাইভেট। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যত বড় বড় এলাকা আছে, যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই সেসব জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। যেখানে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় নাই সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। উদ্দেশ্য একটাই- যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা ঘরে বসে যাতে শিক্ষাটা পায়।
সরকার কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়ে বসে নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছুই আমরা করে যাচ্ছি।’
জাতির পিতা শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা করেছিলেন। সংবিধানে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে উন্নত করতে চেয়েছিলেন।’
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সরকারই প্রথম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ে গবেষণার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা শুরু করে। যার সুফলও দ্রুত লাভ করে।
তিনি বলেন, ‘লবণাক্ত ও খরাসহিষ্ণু, জলমগ্ন ধান আবিষ্কার করার ফলেই আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। শাক-সবজি উৎপাদন, মাছ উৎপাদন, ফলমূল উৎপাদনে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাতারে ওপরের দিকে রয়েছি।’
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরো বেশি করে গবেষণার তাগিদ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে ঠেকে না থাকে সে কারণে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায়ও আমরা বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। সারা দেশে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছি। ১ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে প্রাথমিকে বৃত্তি দিচ্ছি। শিক্ষাবৃত্তির টাকা যাতে বেহাত না হতে পারে সে জন্য শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠানো হয়। পাহাড়ি ও হাওর অঞ্চলের শিশুদের জন্য টিফিনের ব্যবস্থাও আমরা করেছি।