বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কূটনীতিকদের জানাল আ'লীগ
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়সহ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে আওয়ামী লীগ। দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপকমিটির পক্ষ থেকে সোমবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীনসহ মোট ৫০টি দেশের কূটনীতিক ও দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এ সময় কূটনীতিকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় নিয়ে খুশি হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কারণ মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের ফাঁসির আদেশ হয়নি। এ বিষয়ে সরকার রিভিউ চাইবে। হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তার ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পরও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এজন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। গত ১৪ বছর ধরে বিএনপি একই জায়গায় আছে। অতীত থেকে তারা কিছুই শেখেনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্টের হামলার মূল পরিকল্পনা হয়েছিল হাওয়া ভবন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায়। এখান থেকেই জঙ্গিদের হামলার ব্যাপারে সরকারি সহায়তার সব নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
গ্রেনেড হামলার দিনের স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, একজন ভিকটিম হিসেবে সেদিন আমিও সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। এটা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্য হিংস্র আক্রমণ, যেখানে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। হামলার পর কোনো মামলা নেওয়া হয়নি। আহতদের চিকিৎসার সময় ঢাকা মেডিকেলে কোনো চিকিৎসক রাখা হয়নি।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, এটা এমন একটা দিন যেটা কখনও ভোলা যায় না, এমন ঘটনা যা মুছে ফেলা যায় না, এমন কিছু ভয়াবহ স্মৃতি যা সারাজীবন আপনার সঙ্গে থেকে যাবে। এটা বহন করে চলা খুব কষ্টকর।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকতে পারে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক কৌশল দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে; কিন্তু তা না করে গ্রেনেড দিয়ে হামলা করে নির্মূল করবেন। এই হামলার পরে ঘটনাস্থলের সব প্রমাণ তৎকালীন সিটি করপোরেশন মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই গ্রেনেড হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল।
সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন প্রভৃতি নিয়ে কূটনীতিকদের কোনো অভিমত থাকলে তা প্রকাশ করার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় সভায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের কয়েকজন তাদের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেন এবং তারেক রহমানসহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে বিশ্বের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরেন। বক্তব্য শেষে কূটনীতিকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় করেন নেতারা।
এ প্রসঙ্গে শাম্মি আহমেদ সমকালকে বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপির অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের ব্যাপারে বিদেশি কূটনীতিকরা খুব বেশি কিছু জানতেন না। এখন ভিকটিমদের মুখে তাদের ভয়ানক স্মৃতিচারণ শুনে কূটনীতিকদের অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদের চোখে পানি দেখেছি। এজন্য অন্য কোনো বিষয়ে কূটনীতিকরা কোনো কথা বলেননি। তবে একজন কূটনীতিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের অবহিত করা হয়েছে।
সূত্র : সমকাল।