মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম : আজ থেকে ২২ দিন নদীতে জাল ফেলা যাবে না
নিষেধাজ্ঞা যারা মানবে না তাদের জেলে কার্ড থাকবে না : জেলা প্রশাসক এবার মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় স্থল পুলিশ ও নৌ-পুলিশ একসাথে নদীতে নামবে : জেলা মৎস্য কর্মকর্তা


ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে আজ ৭ অক্টোবর রোববার থেকে তিন সপ্তাহের জন্যে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। প্রধান প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০১৮’ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন প্রজননক্ষেত্রের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সবধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তাই চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে এ ২২ দিন ইলিশসহ সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে।
প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় মা ইলিশ রক্ষায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া জেলে ও জনসাধারণকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণে প্রচার-প্রচারণা এবং নদীতে ও উপরে জোরদার অভিযান পরিচালনার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় চাঁদপুরের সকল বরফকল বন্ধ থাকবে। অন্য জেলা থেকে যাতে কোনো বরফ চাঁদপুরে ঢুকতে না পারে এবং অভিযানের মধ্যে ইলিশ ধরে কেটে লবণ দিয়ে রাখা আবার অভিযান শেষে ঘাটে বিক্রি ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গত ২ অক্টোবর উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ৫ অক্টোবর বিকেলে হানারচর ইউপি কার্যালয় সম্মুখে জেলেদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক সমাবেশ করে সদর উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, স্পীড বোট নিয়ে বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি এবার স্থল পুলিশ ও নৌ-পুলিশ একসাথে নদীতে নামবে। অভিযানের এ ২২ দিন সরকার ২০ কেজি করে চাল দিবে। চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত ৪ উপজেলায় মোট ৫১ হাজার ১শ’ ৯০ জন জেলে ভিজিডি কার্ডের আওতায় এ খাদ্য সহায়তা পাবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেছেন, যারা জাটকা ধরার অপরাধে আটক হয়েছে তাদের জেলে কার্ড বাতিল করা হবে। মা ইলিশের নিষেধাজ্ঞা যারা মানবে না তাদেরও জেলে কার্ড থাকবে না।
মা ইলিশ রক্ষা ও স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালের মাছ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন (প্রটেকশান অ্যান্ড কনজারভেশন ফিস অ্যাক্ট, ১৯৫০) অনুযায়ী এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন (২২ আশি^ন থেকে ১৩ কার্তিক) সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলো। এ সময়ে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী এই ২৭ জেলার সব নদ-নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। মৎস্য মন্ত্রণালয় দেশের নদ-নদীগুলোর ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ভোলা জেলার মনপুরা ও ঢলচর, নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার কালিরচর ও মৌলভীর চরকে ইলিশের বিশেষ প্রজনন এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী হতে হাইতকান্দি পয়েন্ট, ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দিন হতে পশ্চিমে সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া হতে গ-ামারা পয়েন্ট প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র। নিষিদ্ধের সময় গত বছর থেকে সাতদিন বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়। এর আগে এ সময় ছিল ১৫ দিন। ২০১৫ সালের আগে মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় ছিল ১১ দিন।
এ আদেশ অমান্য করলে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদ- বা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দ- পেতে হবে। মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, চন্দ্র মাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে এ বছর আশি^ন মাসের প্রথম পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে ৪ ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এবার ২৪ অক্টোবর প্রথম পূর্ণিমা।
উল্লেখিত ২৭ জেলার নদ-নদী ছাড়াও দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাগুলোতেও এই ২২দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। দেশের মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার, চেইনশপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ওই ২২দিন ব্যাপক অভিযানও পরিচালিত হবে। এতো কিছু করার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।