• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর শহরে ডাকাতিয়ার পাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ থামছে না

প্রকাশ:  ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৩:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী। চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন এলাকায় মেঘনার মোহনা থেকে শুরু হয়েছে এ ডাকাতিয়া নদী। জেলা শহর, সদর উপজেলা, ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন অংশে বহমান এ নদী। কিন্তু এ ডাকাতিয়া নদীতে প্রকাশ্যে দখলদারদের ডাকাতির কারণে নদীর আয়তন ছোট হয়ে আসছে ক্রমান্বয়ে। নদীর মাতৃরূপ না বুঝে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী ও মানুষ প্রতিনিয়ত নদীর পাড় দখল করে আসছে। এসব দখল বন্ধ করার যেনো কেউ নেই। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর নদী বন্দরসহ শহর এলাকার ডাকাতিয়ার পাড়গুলো দখল করে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অনেকেই বিআইডাব্লিউটিএ’র নতুন বাজারের জায়গা দখল করে জমজমাট ইট-বালু, কাঠসহ বিভিন্ন মালামালের ব্যবসা করে আসছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি দাবি করে বাড়িঘর তৈরিসহ বড় বড় বিল্ডিং বানাচ্ছেন।
    চাঁদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান মিল গুদারাঘাট, মুখার্জিঘাট, ৫নং ঘাট, ৩নং ঘাট, ১০নং চৌধুরী ঘাট ও নতুন বাজার এলাকায় ডাকাতিয়ার দু’পাড়ে শত শত পাকা বিল্ডিং ও পাকা টিনশেড ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর নির্মাণ করে ডাকাতিয়ার পাড় দখল করায় শহরে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে নদী। তাই নদী পূর্বের চাইতে অনেক ছোট হয়ে গেছে। ডাকাতিয়া দখল সম্পর্কে স্থানীয়, জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন টেলিভিশনে বহুবার প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৌরাত্ম্য থামেনি দখলদারদের।
    চাঁদপুর শহরের বাগাদী রোড বিআইডাব্লিউটিএর মোড়ে বালু ব্যবসা বিগত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারো সেই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। ডাকাতিয়া নদীর পাড় দখল করে ইট-বালু ও কাঠের ব্যবসা দীর্ঘদিন চলে আসায় এলাকার জনদুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে। পুরাণবাজার রঘুনাথপুরেও চলছে একই পদ্ধতিতে বালুর ব্যবসা।
    মুখার্জিঘাট ও আল-আমিন একাডেমির পাশে বোগদাদিয়া জামে মসজিদের পেছনে ছাত্তার সিদ্দিকী নামে জনৈক ব্যক্তি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দখল করে আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন।
    চাঁদপুর পৌর ঈদগাহ সংলগ্ন কোস্টগার্ডের সাবেক জেটির মূল্যবান জায়গা দখল করে নতুনভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে ডকইয়ার্ড বানিয়েছে। পাশাপাশি বাঁশ ব্যবসার আড়ালে সেখানকার বড় একটা জায়গা দখলে নিতে বাঁশের স্তূপ রাখা হয়েছে। মোহামেডান ক্লাবের পেছন থেকে মুখার্জি ঘাট পর্যন্ত সরকারি সম্পত্তির অনেক জায়গা দখলে নেয়ার জন্যে বাঁশ বেড়া ও টিনের ঘর তুলে রাখা হয়েছে। ৫নং ঘাটের বাকি খালি জায়গা দখলেরও পাঁয়তারা চলছে। পুরাণবাজার ব্যবসায়িক এলাকার ১নং খেয়াঘাটের আশপাশে বন্দরের জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের বেদখল হওয়া এসব জায়গা বিআইডাব্লিউটিএর ফোরশোর ল্যান্ড হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দখল হওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় থামছে না নদীর পাড় দখল।
    এ ব্যাপারে বিআইডাব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক ও চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক জানান, ডাকাতিয়া নদীর পাড় দখল উচ্ছেদ করার জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহ্বায়ক, সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব, বিআইডাব্লিউটিএ’র একজন প্রকৌশলী এবং আমাকে সদস্য করে উক্ত কমিটি করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে জেলা প্রশাসন এবং বিআইডাব্লিউটিএ যৌথভাবে সরকারি সম্পত্তি নির্ণয় করার জন্যে সার্ভে করে পরিমাপ করা হবে। এখন দেখার অপেক্ষা চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীর পাড় অবৈধ দখলমুক্ত হয় কিনা।
    এদিকে নদীটি আয়তনে কমে আসার কারণে মালবাহী নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা এবং বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ধীর গতিতে পানি নামার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে বেড়িবাঁধের বাইরের মানুষগুলো ফসলের ক্ষতি ও জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগের শিকার হন। জেলা সদরের মাঝখান দিয়ে বহমান এ নদীর মাতৃত্বরূপ টিকিয়ে রাখতে নদী তীরবর্তী বসবাসকারী জনগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। সচেতনতা, সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আত্মপরিচয় হারাবে ঐতিহ্যের ডাকাতিয়া নদী।

সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ