চাঁদপুরে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে
দেশে ইলিশের সবচেয়ে বড় বাজার চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছের আড়তে বাড়তে শুরু করেছে ইলিশের আমদানি। বুধবার (৮ আগস্ট) এ বাজারে অন্তত ৩৫০ মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। যেখানে গত মাসে প্রতিদিন আমদানি ছিল ৩০-৫০ মণ ইলিশ। এসব মাছ স্থানীয় বাজারগুলোসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চল তথা সাগর অঞ্চল থেকে এখনও প্রচুর ইলিশ আসতে শুরু করেনি। ওইসব এলাকা থেকে মাছের আমদানি শুরু হলে এ বাজার ইলিশে কানায় কানায় পূর্ণ হবে। তখন দেশের বাজারেও সাধারণ ক্রেতারা প্রচুর ইলিশ দেখবেন। দামও অনেক কমবে।
মাছঘাটের ব্যবসায়ী শাহীন বলেন,‘গত মাসের চেয়ে এখন ইলিশের আমদানি সামান্য হলেও বেড়েছে। আরও কিছু দিন পর অর্থাৎ এ মাসের মাঝামাঝিতে প্রচুর ইলিশ বাজারে আমদানি হতে পারে। এখন বাজারে যে ইলিশ দেখছেন, তার বেশিরভাগই চাঁদপুর অঞ্চলের। কিছু মাছ আসছে নোয়াখালী এলাকা থেকে।’ চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের আড়তদার মো. সাগর আলম বেপারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘নামার ফিশিংয়ের মাছ আমদানি একটু বেশি। আজও ৪-৫টি ফিশিং বোট মাছঘাটে এসেছে। প্রতিটি ফিশিং বোটে কমপক্ষে ৫০ মণ থেকে ৭০ মণ মাছ থাকে। হাতিয়া-সন্দ্বীপ, বরিশাল এলাকা থেকে গত দুদিন যাবত মাছ একটু বেশি আসছে। লোকাল মাছসহ এখন প্রতিনিদি চাঁদপুর মাছঘাটে সাড়ে ৩শ থেকে ৪০০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে।’ এই মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন- মাছের আমদানি বাড়তে শুরু করলেও দাম এখনো একটু বেশি। এ বাজারে পাইকারী দরে এক কেজির বেশি সাইজের মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪শ টাকা, ৮ থেকে ৯শ গ্রাম জনের মাছ ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা, ৬শ-৭শ গ্রামের মাছ ৭৫০-৮০০ টাকা, ৫০০ গ্রামেরগুলো সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকা।
চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশ প্রক্রিয়াজাত করছেন শ্রমিকরা।
চাঁদপর বড়স্টেশন মাছঘাটের আরেক আড়তদার ইমান গাজী জানান, চাঁদপুর অঞ্চলের মাছের দাম সব সময়ই একটু বেশি থাকে। তিনি জানান, এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫শ টাকা, ৯শ গ্রাম ওজনের মাছ প্রতি কেজি ১২৫০, ৭শ ও ৮শ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১ হাজার টাকা, ৫শ গ্রামের প্রতি কেজি ৭শ এবং ৪শ গ্রাম ও তার চেয়ে ছোট ইলিশ প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘চাঁদপুর মাছঘাটে এখন যে পরিমাণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে তা তুলনামূলক বেশি নয়। কারণ, এখানে ভর মৌসুমে হাজার মণেরও বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে।’
চাঁদপুর কান্ট্রি ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মল্লিক বলেন, ‘মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) থেকে মাছের আমদানি বেড়েছে। তবে চাঁদপুর অঞ্চলে এখনও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই এখানের জেলেদের মুখে হাসি ফোটেনি। তবে যেহেতু দক্ষিণাঞ্চলে মাছ ধরা পড়তে শুরু করেছে। আশা করি, চাঁদপুর অঞ্চলেও খুব শিগগিরই প্রচুর মাছ ধরা পড়বে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, ‘আগে থেকে এখন মাছ কিছুটা বেশি ধরা পড়ছে। কিছু দিনের মধ্যেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।’
সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ মৃধা বলেন, ‘এটা দেশের ইলিশের সবচেয়ে বড় বাজার। আজ তিন থেকে চারশ মণ ইলিশ ঘাটে এসেছে। এভাবে ধরা পড়তে শুরু করলে আগামী দুই মাস প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। তাই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এ বছর উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে। যা গত বছরের তুলনায় দেড়গুণ বেশি হবে বলে আশা করছি।’
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনে করে, জ্যেষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু বিষয়টি ঠিক নয়। আগস্ট থেকে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়। আর ভরা মৌসুম হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।’ তিনি বলেন, ‘চাঁদপুর অঞ্চলে একটু কম ধরা পড়ছে। তবে ইলিশ আসা শুরু হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই চাঁদপুরেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি জানান, গত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।