সিএসডি গোডাউনকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট নানা অপকর্মের সাথে জড়িত
চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার এলাকায় অবস্থিত চাঁদপুর সিএসডি গোডাউনটি একটি সিন্ডিকেটের কব্জায় দীর্ঘকাল যাবৎ। এরা শুধু পুরো জেলার সরকারি চাল ক্রয়-বিক্রয় ও বিলি-বণ্টনই নিয়ন্ত্রণ করে না, এরা এই গোডাউন অঙ্গনকে নানা অপরাধ ও অপকর্মের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত করেছে। এক সময় চাঁদপুর শহরের আলোচিত মিলন রাণী হত্যাকা-ের ঘটনাটি এই সিএসডি গোডাউনের ভেতরে ঘটেছিলো। আর এ ঘটনার মূল হোতাও ছিলো গোডাউনকেন্দ্রিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি।
সরকারি চাল নিয়ে এই জালিয়াত চক্রটি বলতে গেলে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে থাকে। একটি গোষ্ঠীর বলয়ের হওয়ায় সে গোষ্ঠীর নাম বিক্রি করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার শুরু করে চক্রটি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা দলের নাম বিক্রি করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সিএসডি গোডাউনকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। গড়ে তোলে তারা শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় পুরো এই সরকারি খাদ্য গুদামের চাল ডেচপাস হতে শুরু করে সবকিছু। রাতারাতি তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে থাকে। আর এই অবৈধ অর্থ উপার্জনের মধ্য দিয়ে তারা নানা অপকর্ম ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা যিনি তিনি নিজেকে সবসময় খুব ক্ষমতাধর মনে করে থাকেন এবং বিভিন্নজনের সাথে আলাপচারিতায় বলেও থাকেন। তার একজন বড় ভাই এ জেলার জনপ্রতিনিধিদের একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনিসহ সিন্ডিকেটটি আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে। এই তিনিই মিলন রাণী হত্যাকা-ের মূল হোতা।
মিলন রাণী হত্যাকা-টি নব্বইর দশকের শেষ দিকের ঘটনা। ঘটনার দিন রাতে মিলন রাণী জানতে পারেন তার ছেলেকে কে বা কারা অপহরণ করে সিএসডি গোডাউনের ভেতরে নিয়ে আটকে রেখেছে। তিনি এ খবর জানতে পেরে ছেলের খোঁজে সিএসডি গোডাউনের ভেতরে যান। তখন গোডাউনের ভেতরে ওই সিন্ডিকেটটি মদের আসর বসিয়েছিলো। তারা মিলন রাণীকে গোডাউনের ভেতরে দেখতে পেয়ে তাকে কৌশলে নিজেদের কাছে আটকে রাখে। পরে ওই রাতে তারা মিলন রাণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তারা মিলন রাণীকে খুন করে। খুন করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেয়ার সময় কমিউনিটি পুলিশের টহল সদস্যদের চোখে পড়লে তারা রাস্তায় লাশ রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা নিয়ে তখন চাঁদপুরের হাতেগোণা যে কয়েকটি পত্রিকা ছিলো সেগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে ঘটনার মূল হোতাদের নাম পরিচয় তখনও পত্রিকায় সরাসরি লেখা সম্ভব হয়নি তাদের ভয়ে। কারণ, তারা তখন পত্রিকা অফিসগুলোতে লোক পাঠিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসতো। তারপরও তখন দু-একটি পত্রিকা ইশারা-ইঙ্গিতে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে। এভাবে পত্রিকায় লেখালেখি অব্যাহত থাকায় ওই চক্রটি তখন চাঁদপুরের পত্রিকাগুলোর উপর নাখোশ ছিলো। এই জেদে তখন তারা নিজেদের শেল্টারের জন্যে একটি নতুন পত্রিকাও বের করে।
শুধু মিলন রাণী হত্যাই নয়, এছাড়া আরো নানা অপকর্মের সাথে জড়িত এই সিন্ডিকেটটি। সরকার পরিবর্তন হলেও এই সিন্ডিকেটটির কোনো পরিবর্তন বা সমস্যা হয় না। সব সরকারের আমলেই তারা বহাল তবিয়তে থাকে। ‘অপরাধীদের কোনো দল বা আদর্শ নেই’ এই মন্ত্রে বিশ^াসী সকল অপরাধী সব সরকারের আমলেই এক থাকে। তেমনি এদের বেলায়ও হয়েছে।
চাঁদপুরের জনগণ স্থানীয় সর্বোচ্চ প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা করছে-তাঁরা যেনো এই সিন্ডিকেটটি ভেঙ্গে দিয়ে সরকারি এই খাদ্য গুদামটিকে রক্ষা করেন।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ