আইন-আদালত কোনো কিছুর প্রতিই তোয়াক্কা নেই
জেলা পরিষদের সামনে নিরীহ ফাতেমা বেগমের ২৬ শতাংশ জায়গা জবরদখল করে নির্মিত হচ্ছে শারমিন ফিলিং স্টেশন
আদালতে মামলা রয়েছে, (যদিও মামলার তারিখের আগেই একতরফাভাবে মামলা খারিজ করিয়ে নেয়), লিগ্যাল এইড থেকেও নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুর প্রতিই কোনো তোয়াক্কা নেই। সবকিছু উপেক্ষা করে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাটওয়ারী। আর এটি করতে গিয়ে ফাতেমা বেগম নামে একজন নিরীহ নারীর ২৬.৫০ শতাংশ জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। যদিও জিন্নাহ পাটওয়ারী এই জায়গা ক্রয় করেছেন বলে দাবি করেন, কিন্তু যারা জিন্নাহ পাটওয়ারীর কাছে এই জায়গাটি (মোট ৫০ শতাংশ) বিক্রি করেছেন তারা বৈধভাবে বিক্রি করেননি। আর এ প্রতারণা ফাতেমা বেগমের সাথে করেছেন তারই আপন মামা-খালারা। এর প্রতিকার পেতেই ফাতেমা বেগম আদালতে মামলা করেছেন। কিন্তু সেখানেও মফিজুর রহমান পাটওয়ারী ও জিন্নাহ পাটওয়ারী গং প্রভাব বিস্তার করে মামলা খারিজ করিয়ে নেন। পাল্টা আপীল করার জন্যে নকলও দিচ্ছে না। পরে লিগ্যাল এইডে আবেদন করলে সেখান থেকে ১০ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে জবাব দিতে জিন্নাহ পাটওয়ারীকে নোটিস দেয়া হয়। তাতেও তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। অবৈধভাবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই নিজের ২৬ শতাংশ জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ার সার সংক্ষেপ বলতে গিয়ে নিরীহ ফাতেমা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আর এ অবৈধভাবে সিএনজি ফিলিং স্টেশনটি করা হচ্ছে বাবুরহাট এলাকায় জেলা পরিষদ ভবনের সামনে সরকারি খালের দক্ষিণ পাড়ে ফসলি জমিতে। যেটি করতে গিয়ে সরকারি খালেরও প্রায় ৮০ ভাগ ভরাট করে কালভার্ট করা হচ্ছে।
চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট শিলন্দিয়া গ্রামের রফিক প্রধানিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম গত ১৭/৪/২০১৮ খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চাঁদপুর আদালতে মোকদ্দমা (নং ৩৭৮/২০১৮ খ্রিঃ) দায়ের করেন। এ মামলায় বিবাদী করা হয় মফিজুর রহমান পাটওয়ারী, পিতা-মৃত আঃ মতিন পাটওয়ারী, সৈকত পাটওয়ারী, পিতা-মফিজুর রহমান পাটওয়ারী, জিন্নাহ পাটওয়ারী, পিতা-মৃত নুরুজ্জামান পাটওয়ারী এবং গিয়াস উদ্দিন পাটওয়ারী, পিতা-মৃত আঃ হালিম পাটওয়ারীকে। ফাতেমা বেগম উল্লেখ করেন, তার তফসিলি নালিশী ভূমি নিয়ে বিজ্ঞ দেওয়ানী আদালতে বন্টন ৬১/১৫ খ্রিঃ নং মোকদ্দমা চলমান আছে। তাতেও প্রতিপক্ষগণ ক্ষান্ত হননি। তফসিল নালিশী ভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর জেলা ও থানাধীন ৩০নং হালে ৪৮নং শিলন্দিয়া সিএস ১৫১নং খতিয়ানভুক্ত বিএস জরিপী ৪৯নং খতিয়ানভুক্ত খারিজী ১৩২৫ ও ৮০০নং খতিয়ানভুক্ত সাবেক ৫৬ দাগে হালে ৯২ দাগে মোঃ .২৬৫০ একর ভূমি। যাহার মধ্যে .১০৫০ একর ভরাট ভিটি ভূমি এবং .১৬ একর নাল ভূমি বটে। চৌহুদ্দি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, উত্তরে-সরকারি খাল ও মনির হোসেন, পূর্বে-বজলুর রহমান গং, দক্ষিণে-বজলুর রহমান, পশ্চিমে-বজলুর রহমান গং।
ফাতেমা বেগম জানান, তিনি হেবা, সাফকবালা ও নিজ মাতৃওয়ারিশ সূত্রে উক্ত তফসিল নালিশী সম্পত্তিতে ২৬.৬১ শতাংশ সম্পত্তির মালিক হন। এর মধ্যে তিনি ২৬.৫০ শতাংশ ভূমি ১৩/৬/২০১২ তারিখে খারিজ খতিয়ান করিয়ে নেন। ফাতেমা জানান, তিনি তার বোন রাশেদা থেকে সাফকবালা মূলে মালিক হন, আর অন্য ভাই-বোনেরা তাকে হেবা করে দেন। তিনি জানান, তার মামা মফিজুর রহমান পাটওয়ারী মূলত তার সাথে প্রতারণা করে আসছে। তার মা মনোয়ারা বেগমের নাম গোপন রেখে ৫ ভাই ৬ বোনের নামে ৩২৬নং খারিজ খতিয়ান সৃজন করেন তার মামা মফিজুর রহমান। এরপরই মফিজুর রহমান, তার দুই বোন রোকেয়া ও তফুরা বেগম ৫০ শতাংশ ভূমি জিন্নাহ পাটওয়ারীর কাছে বিক্রি করেন। যেই ৫০ শতাংশের মধ্যে ফাতেমা বেগমের ২৬.৫০ শতাংশ ভূমিও রয়েছে। এই সম্পত্তির মধ্যে ১০.৫০ শতাংশ ভূমিতে ফাতেমা বেগম গাছ রোপণ করেন এবং ১৬ শতাংশ ভূমিতে ইরি ধান ফসল করে ভোগ দখলে আছেন। ফাতেমা বেগম যখন জানতে পারেন যে, তার জমিসহ তার মামা ও খালারা বিক্রি করে দিয়েছেন, তখনই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন এবং তার ফসলি জমি ও গাছগাছড়ার কোনো ক্ষতিসাধন যেনো করতে না পারে সেজন্যে তিনি আদালতের কাছে প্রতিকার চান। কিন্তু এরপরও ওই দখলবাজরা ক্ষান্ত হননি বলে তিনি জানান। ফাতেমা বেগম বলেন, তার দখলীয় সম্পত্তির গাছগাছড়া এবং ফসল ধ্বংস করে জিন্নাহ পাটওয়ারী সেই ভূমি ভরাট করে শারমিন ফিলিং স্টেশন করছেন। তিনি জানান, আদালতে তার দায়ের করা মামলার পরবর্তী তারিখ ছিলো ৩০/৭/২০১৮ খ্রিঃ। অথচ ওই তারিখের আগেই বিবাদীরা প্রভাব খাটিয়ে রমজান মাসেই ওই মামলা খারিজ করিয়ে নেন। এরপর ফাতেমা বেগম শুধুমাত্র জিন্নাহ পাটওয়ারীকে বিবাদী করে গত ২৮/৬/২০১৮ খ্রিঃ তারিখে লিগ্যাল এইডে মামলা করেন। লিগ্যাল এইড থেকে ১০ দিনের জন্যে কাজ বন্ধ রেখে এই সময়ের মধ্যে জবাব দিতে নোটিশ দেয়া হয় জিন্নাহ পাটওয়ারীকে। কিন্তু এই নোটিসের পরও সেখানে ভরাট কাজ বন্ধ নেই।
ফাতেমা বেগম আরো জানান, ইতিপূর্বে তিনি মনির হোসেন গংয়ের সাথে এ জায়গা নিয়ে মামলা করে তিনি রায় পান এবং ভোগ দখলে আছে মর্মে ওই রায়ে উল্লেখ করা হয়। সে মামলা নং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারা মতে মিস ২০১/১৫খ্রিঃ। এ মামলায় তিনি রায় পানি ২৬/১১/২০১৫ খ্রিঃ তারিখে। এছাড়া সদর এসিল্যান্ড অফিসের আদেশনামাও তার পক্ষে রয়েছে। তিনি আরো জানান, মফিজুর রহমান, তফুরা বেগম ও রোকেয়া বেগমের (১১/১০/২০১১ খ্রিঃ) বায়না দলিলে দেখা গেছে, তাদের চৌহুদ্দী এবং জিন্নাহ পাটওয়ারীর কাছে বিক্রির চৌহুদ্দীর কোনো মিল নেই। এতেই বুঝা যায় যে, এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই কী অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন।
এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে গতকাল এই প্রতিবেদক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাটওয়ারীর (০১৭১১৭০৯৮৭৬) নাম্বারে বেশ ক'বার ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগমসহ সচেতন মহলের প্রশ্ন-জিন্নাহ পাটওয়ারী কী এমন ক্ষমতাধর ব্যক্তি যে, আইন-আদালত, নিয়ম-কানুন কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না? সবকিছুর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি খাল খরাট হতে শুরু করে সবকিছুই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ