• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শাহরাস্তিতে নববধূ হত্যার সাতদিন পর মামলা নিলো পুলিশ

প্রকাশ:  ০২ জুলাই ২০১৮, ০৯:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 শাহরাস্তি উপজেলায় নববধূ মেহজাবীন সুলতানা ইতি (১৯) হত্যার ঘটনার সাতদিন পর অবশেষে শাহরাস্তি থানা পুলিশ মামলা নিয়েছে। গত শুক্রবার রাত সোয়া ১০টায় নিহত গৃহবধূর ভাই নূরে আলম বাদী হয়ে মেহজাবীনের স্বামীসহ চারজনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন। গত ২৩ জুন স্বামীর বাড়ি থেকে মেহজাবীন সুলতানা ইতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, শ^শুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকা না পেয়ে মেহজাবীনকে হত্যা করেছে।
    মেহজাবীনের পরিবার ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল ২ লাখ টাকা দেনমোহরানায় শাহরাস্তি পৌরসভার ঘুঘুশাল পালবাড়ির আমির হোসেনের কনিষ্ঠ মেয়ে মেহজাবীনের সঙ্গে উপজেলার মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের মালরা মজুমদার বাড়ির আব্দুল কুদ্দুসের মেজো ছেলে একরামুল হক রাজুর (২৭) বিয়ে হয়। এ সময় পাত্রপক্ষকে ৮২ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার, ৫০ হাজার টাকা ও আসবাবপত্র দেয়ার কথা।
    মামলার বাদী নূরে আলম জানান, আরও টাকা ও ফার্নিচারের জন্যে বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ^শুরবাড়ির লোকজন তার বোনকে নির্যাতন শুরু করে। এ নিয়ে কয়েকবার সালিসও হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা অসহায় গরিব। তাদের কাছে সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা সময় দিলো না। বিয়ের মাত্র ২ মাস ১৮ দিনের মাথায় আমার বোনটাকে মেরে ফেলা হলো।
    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেহজাবীন সুলাতানাকে মারার পর আত্মহত্যা বলে এলাকায় প্রচার করে শ^শুর বাড়ির লোকজন। ওই রাতে থানা পুলিশ অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে। তখন মেহজাবীনের পরিবার হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। পরে মেহজাবীন সুলতানার পরিবার গত ২৭ জুন জেলা পুলিশ সুপার ও ২৯ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর পুলিশ মেহজাবীনের মামলাটি রেকর্ড করে। মেহজাবীন এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সে করফুলেন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলো।
    মেহজাবীনের বড় বোন তাহমিনা বলেন, আমার বোন শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা অবস্থায় আত্মহত্যা করতে পারে না। সে আল্লাহর হুকুম পালনের জন্যে চেষ্টা করছে। সে আত্মহত্যার মতো পাপ কাজে লিপ্ত হবে কেনো? সে গলায় ফাঁস দিলে তার লাশ কে নামিয়েছে এ তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা গিয়ে দেখি তার লাশ নিচে রাখা। তার গায়ে ওড়না জড়ানো। ঘরের আঁড়ার সাথে ওড়না বেঁধে তারা অপপ্রচার করে। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্য ঘরে উপস্থিত থাকায় কীভাবে সে গলায় ফাঁস দিবে? ইফতারের সময় যৌথ পরিবার ঘরে তার শ^শুর, শাশুড়ি, ভাসুর, ভাসুরের স্ত্রী ও দেবর থাকায় কীভাবে সে আত্মহত্যা করবে? গলায় ফাঁস দিলে দরজা বন্ধ করে দিবে কিন্তু দরজা খোলা ছিলো। তারা তার হাতে সরিষার তৈল মালিশ করেছে ও ডাক্তার নিয়েছে কেনো? ঘটনার পর আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাইনি। আমার বোন বিশদিন পূর্বে আমাদের বাড়ি থেকে শ^শুর বাড়িতে যাওয়ার সময় একটা মোবাইল নিয়ে যায়। শ^শুর বাড়ির অত্যাচারের বিষয়গুলো রেকর্ড করে পিতা-মাতাকে শোনালে তারা তখন হয়ত মেহজাবীনের কথা বিশ^াস করবেন। মেহজাবীনের স্বামী বিষয়টা জানার পর তার বড় ভাই হাসানকে জানায়। ঘটনার দিন বিকেল ৩টায় মোবাইলটি দেয়ার জন্যে আমাদের কল দিয়ে হাসান বলে, মোবাইল না দিলে তাকে জবাই করে ফেলবো। আমার মা তাদেরকে শান্ত হওয়ার জন্যে বলেন। সন্ধ্যার সময় খবর পাই সে আত্মহত্যা করেছে। আমরা হত্যার বিচার চাই। ন্যায় বিচার না হলে টাকা দিয়ে অপরাধী পার পেয়ে যাবে আর এভাবে অসংখ্য ইতি শ^শুর বাড়িতে লাশ হয়ে যাবে।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, বিয়ের ঘটক শাহআলম অর্থের লোভে অশিক্ষিত ছেলের সাথে শিক্ষিত মেধাবী ছাত্রীটাকে এ পরিবারে বিয়ের আয়োজন করে। এ ঘটনাকে সে দামাচাপা দেয়ার জন্যে নিহতের পরিবারকে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি চালাচ্ছে। ছেলের পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।
    মেহজাবীন সুলতানার মা ফিরোজা বেগম জানান, অভাবের কারণে মেয়েটাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছি। তারা আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিলো না। আমি মেয়ের হত্যার বিচার চাই। সমাজের প্রভাবশালীরা আমি গরিব বলে কিছু টাকা নিয়ে আপোস করার প্রস্তাব দেয়। তারা আমার পরিবারকে হুমকি প্রদান করছে। টাকা দিয়ে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করা যায়। আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ও জেলা পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমি গরিব বলে আজও এ হত্যার কোনো আসামী আটক হয়নি। আমি ন্যায় বিচার চাই। খুনিদের শাস্তি হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। সমাজের মানুষ শিক্ষা নিবে ইতির মতো আর কারো জীবন দিতে হবে না। আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাই তাদের নির্দেশে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে।
    মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নাছির উদ্দিন জানান, আসামীরা পলাতক রয়েছে, তাদেরকে গ্রেফতার করা যায়নি।

সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ

সর্বাধিক পঠিত