মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প যেনো কৃষকদের জন্যে অভিশাপ
জলাবদ্ধতার কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে কৃষকরা ॥ কর্তৃপক্ষ যেনো নির্বিকার
মতলব উত্তরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প যেনো এখন কৃষকদের জন্যে একটি অভিশাপ। এ সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা। ময়লা আবর্জনা এবং খালগুলো অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। প্রতি বর্ষায় মতলব উত্তরের কৃষকরা এ ভোগান্তিতে পড়ে। কিন্তু এর স্থায়ী সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই। এ জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের ‘পূর্ব হানিরপাড় উন্নয়ন কর্মে যুব সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। এ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মোঃ কাউছার দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন, সদস্য রাব্বানী, সোহেল, শামীম, আরিফ, রুবেল, কাসেম, রাসেদ, সোহেল, জনি, তাইজুদ্দিন, জাহিদ, নূর মোহাম্মদ, ঈষান প্রমুখ।
প্রতিবছর বর্ষার সময় বৃষ্টির পানিতে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে, এবারো তাই হয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় এবং অবৈধ দখলের দৌরাত্মে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে খালগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে না পারাই এ জলাবদ্ধতার মূল কারণ। এবার জলাবদ্ধতার কারণে পাকা বোরো ধান ও সবজির জমির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে চলতি মৌসুমের ফসল করতে পারছে না কৃষকরা। ফলে অনাবাদি থাকছে কয়েক হাজার একর জমি। প্রতিবছর বর্ষায় এভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এ সেচ প্রকল্পটি এখন কৃষকের জন্যে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার কলাকান্দা, মিলারচর, মাথাভাঙ্গা, পাঁচআনী, নাউরী, হলদিয়া, লুধুয়া, একলাশপুর, জোড়খালী, শিকিরচর, ছেংগারচর, কেশাইরকান্দি, জীবগাঁও, পাঠানবাজার, ঝিনাইয়া, মরাদন, ইসলামাবাদ, অলিপুর, নয়াকান্দি, সুজাতপুর, ঠাকুরচর, রুহিতার পাড়, হানিরপাড়, বদরপুর, বাগানবাড়ি, নিশ্চিন্তপুর, দুর্গাপুর, লবাইরকান্দি, ইসলামাবাদ, ফতেপুরসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে পাকা ধান, বীজতলা এবং ভুট্টা, আঁখ, সবজি, ফল ও কাঠ গাছের বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য খামার তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও ফসলি জমি আবাদ করতে না পারায় কৃষক পরিবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কৃষকরা প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা না পাওয়ায় এ সেচ প্রকল্পকে তাদের জন্যে অভিশাপ মনে করছেন।
এদিকে জলাবদ্ধতা কয়েকদিন যাবৎ স্থায়ী হলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ পানি সরানোর দ্রুত ব্যবস্থা না করায় ফসলহানি ঘটছে। এভাবে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতায় এ প্রকল্পের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্যে তথা জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান জরুরি বলে দাবি কৃষি পরিবারগুলোর। তা না হলে মূলধন হারিয়ে কৃষকরা পথে বসবে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় ত্রুটি, খালগুলো আবর্জনা ও কচুরিপানা দিয়ে আবদ্ধ থাকায় এবং পাম্প দ্বারা দ্রুত বৃষ্টির পানি প্রকল্পের বাহিরে না সরানোর ফলে ভয়াবহ এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
এদিকে এ জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে যে সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে, মানববন্ধনকালে সে সংগঠনের সদস্যরা বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম মতলবের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করবো জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুর আহমদ বলেন, বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এমপিকে অবগত করা হয়েছে। তিনি সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ