গণপিটুনি থেকে বাঁচতে সাঁতরে নদী পার হল পুলিশ!
ঢাকার ধামরাইয়ে গানের অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা ও দুই কনস্টেবল গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ গণপিটুনির কথা অস্বীকার করেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আয়োজকদের কাছে ওই পুলিশ সদস্যরা টাকা দাবি করেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ধামরাইয়ের বরদাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধামরাইয়ের বরদাইল এলাকার পাশেই মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ভাটিরচর গ্রাম। ভাটিরচরের আনসার আলীর ছেলে আব্বাস আলীর বিয়ে উপলক্ষে বরদাইলে বংশী নদীর তীরে খোলা মাঠে গতকাল রাতে গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কমপক্ষে চার হাজার মানুষ ওই অনুষ্ঠান দেখতে যান। ধামরাই থানার দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ রানা ও লিটন হোসেন দুজন কনস্টেবল নিয়ে সাদা পোশাকে রাত ১২টার দিকে ওই অনুষ্ঠানে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, দুই পুলিশ কর্মকর্তা অনুষ্ঠানের অনুমতি আছে কিনা জানতে চান। আয়োজকেরা তা দেখাতে ব্যর্থ হন। এ সময় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা চাঁদা দাবি করেন। আয়োজকেরা টাকা দিতে না চাইলে তাঁরা কনসার্টে অংশ নেওয়া শিল্পীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তাঁরা সাউন্ড সিস্টেমের তার খুলে ফেলেন। এরপরই উপস্থিত দর্শকেরা উত্তেজিত হয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্যদের মারধর করা হয়। জনতার হাত থেকে বাঁচতে এক কর্মকর্তা ও দুই কনস্টেবল সাঁতরে বংশী নদীর অন্য পারে চলে যায়। অপর এক কর্মকর্তা নৌকায় নদী পার হন।
খবর পেয়ে স্থানীয় কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কালীপদ সরকার ও নারী সদস্য সালমা বেগম অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন।
আব্বাস আলীর চাচা শরীফুল ইসলাম বলেন, ধামরাই থানার পুলিশ গানের অনুষ্ঠানের অনুমতি না থাকার অভিযোগ তুলে প্রথমে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পরে তা ৫০ হাজারে নামানো হয়। তাতেও রাজি না হলে ওই পুলিশ সদস্যরা সাউন্ড সিস্টেমের তার খুলে ফেলেন। এতে দর্শকেরা উত্তেজিত হয়ে তাদের মারধর করে। দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে এএসআই মাসুদ রানা ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
ইউপির নারী সদস্য সালমা বেগম বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা যখন ঘটনাস্থলে যান তখন এএসআই লিটন হোসেনসহ দুই কনস্টেবল সাঁতরে তীরে উঠছিলেন। তাদের মধ্যে লিটন ও দুই কনস্টেবলের শরীরের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ইউপি চেয়ারম্যান কালীপদ সরকার বলেন, পুলিশকে মারধরের কথা শুনেছি। পরে খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তবে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন এএসআই মাসুদ রানা ও লিটন হোসেন। তাঁরা বলেছেন, এ রকম কোনো ঘটনার কথাই তাঁরা জানেন না। বরদাইল ও ভাটিরচর এলাকা চেনেন না বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।
তবে ধামরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাঈদ আল মামুন বলেছেন, মাসুদ ও লিটন গতকাল পুলিশ নিয়ে ওই গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, অনুষ্ঠানে অশালীন নাচের কথা শুনে তাঁরা সেখানে যান। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এক আসামিকে আটক করতে গেলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে জামিনে থাকার প্রমাণ দেখে ওই আসামিকে ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তিনি আরও বলেন, মারপিটের কোনো কথা ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা বলেননি। এলাকাবাসীও কোনো অভিযোগ করেনি।