পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগেই বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রশ্নপত্র!
এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র যশোর শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে ‘ফাঁস’ হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগেই নোটিশ বোর্ডে আপলোড করা হয় প্রশ্নপত্র। এরপর প্রতিষ্ঠান প্রধানর শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র প্রিন্ট দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করেছে। একদিকে প্রশ্ন ফাঁস, অন্যদিকে দেরিতে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। বোর্ডের আওতাধীন ১০ জেলায় প্রায় আধাঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয়।
নতুন পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন, সার্ভারের সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে ওয়েবসাইটে প্রশ্ন আপলোড করা হয়েছে।
সূত্র মতে, এবার এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রথমবারের মতো অনলাইনে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় যশোর শিক্ষা বোর্ড। প্রশ্ন ব্যাংক পদ্ধতির অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ।
তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে সার্ভারে প্রশ্নপত্র আপলোডে ব্যর্থ হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও প্রশ্নপত্র হাতে পাননি।
এরপর তারা বোর্ডে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, সার্ভার সমস্যার কারণে বোর্ডের ওয়েবসাইটের উন্মুক্ত নোটিশ বোর্ডে প্রশ্নপত্র আপলোড করা হয়েছে। সেখান থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পরীক্ষা নিতে হবে। গোপনীয়তা বজায় রেখে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার নিয়ম থাকলেও এবার তার ব্যত্যয় ঘটেছে। শিক্ষাবোর্ড নিজেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়েছে।
একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক জানান, বোর্ডের চরম অব্যবস্থাপনার একটি দৃষ্টান্ত এটি। নতুন পদ্ধতি চালুর আগে বিষয়টি নিয়ে আরো সচেতন হওয়া জরুরি ছিল। এভাবে তো মডেল হওয়া যাবে না।
তারা বলেন, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে আজ বোর্ড নিজেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিলো। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধাঘণ্টা আগে ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডে আপলোড করা হলো। উন্মুক্ত নোটিশ বোর্ডের প্রশ্নপত্র যে কেউ ডাউনলোড দিতে পারে। অনেকে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড দিয়েছে। প্রশ্নফাঁস হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে যশোর এমএসটিপি কলেজিটে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে সার্ভারে প্রশ্নপত্র পাওয়ার কথা। সার্ভারে নক করলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের মোবাইল নম্বরে একটি পাসওয়ার্ড আসবে। সেটি দিলে প্রশ্ন ওপেন হবে। কিন্তু আজ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সার্ভারে প্রশ্ন পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, বোর্ডে যোগাযোগ করলে জানানো হয় ওয়েবসাইটের নোটিশে আপলোড করা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা প্রশ্নপত্র ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট দিয়েছি। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন দিতে পেরেছি। যথা সময়ে প্রশ্ন না পাওয়া টেনশনে ছিলাম। শিক্ষার্থীরা বসে ছিল, ঠিক সময়ে প্রশ্নপত্র দিতে পারিনি।
জানতে চাইলে বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম বলেন, সার্ভারে সমস্যা থাকায় বাধ্য হয়ে ওপেন নোটিশ বোর্ডে প্রশ্নপত্র আপলোড করা হয়। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রশ্ন প্রিন্ট দিয়ে পরীক্ষা নিয়েছে। দেরিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সময় পুষিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, পরীক্ষার অল্প সময় আগে প্রশ্ন আপলোড করা হয়েছে। সেই সময় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে ছিল। এজন্য তারা ফাঁস প্রশ্নপত্র হাতে পায়নি।
উল্লেখ্য, যশোর শিক্ষাবোর্ড প্রশ্নব্যাংক পদ্ধতি চালু করেছে। সার্ভারে আপলোড করা প্রশ্নপত্র স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পাসওয়ার্ড ও মোবাইল ফোনের ম্যাসেজের মাধ্যমে ওপেন করে প্রিন্ট দিতে পারবে। মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে এ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।