• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আ.লীগের উপকমিটিতে থাকা ৪ ভিসি কী বলছেন?

প্রকাশ:  ১১ অক্টোবর ২০১৭, ০১:৪০ | আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০১৭, ০১:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির খসড়া তালিকায় দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) স্থান পেয়েছেন। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান। এ ছাড়া কমিটিতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো ১১ শিক্ষক। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক রয়েছেন।

এদিকে চার উপাচার্যকে একটি রাজনৈতিক দলের কমিটিতে রাখা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে; চলছে নানামুখী গুঞ্জন। মঙ্গলবার দিনভর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তবে যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা অসন্তুষ্ট নন। একজন উপাচার্য বলেছেন, এটি নতুন নয়। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে আছেন।

ওই কমিটিতে ৮ জন সংসদ সদস্যও আছেন। এর বাইরে পরিচিত কিন্তু দলে সক্রিয় নন, এমন ব্যক্তিও আছেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষমাণ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির খসড়া তালিকা থেকে জানা যায়, দলটির উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেককে আহ্বায়ক এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপাকে সদস্য সচিব করে তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে এটিকে খসড়া তালিকা বলা হলেও এর নিচে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নাম ও পদসহ স্বাক্ষর রয়েছে।

বিভাগীয় উপকমিটি গঠন বিষয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫(১)-এর ‘চ’ ধারায় বলা আছে- ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করিয়া উপ-কমিটি গঠন করিবে। উক্ত উপ-কমিটি একজন চেয়ারম্যান, একজন সম্পাদক, অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহ-সম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হইবে। জাতীয় সংসদীয় দলের সদস্যবৃন্দ, যাহারা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, তাহারা পদাধিকার বলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত উপ-কমিটির সদস্য হইবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন উপাচার্য মনে করেন, যিনি উপাচার্য হবেন তাকে পদে থেকে কোনো দলের পদে না থাকাটাই শ্রেয়। তা না হলে তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন।

দলীয় উপকমিটিতে নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি আমি শুনেছি। কমিটিতে থাকতে আগ্রহী কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ হোক, তার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটির উপসম্পাদক পদে ছিলাম। এ পদ আমার জন্য নতুন নয়। আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার আদর্শ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ। আমি যে আদর্শ লালন করি সে আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলে দোষ কী? এমন কোথাও লেখা নেই যে রাজনীতি করতে পারব না।

কমিটিতে জানিয়ে রাখা হয়নি- দাবি করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত আমাকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েও জানানো হয়নি। তবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের সদস্য যে কেউ হতে পারে। শিক্ষিত ও যারা সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, তারা রাজনৈতিক দলে যুক্ত না হলে অশিক্ষিত এবং অযোগ্য লোকরা এ জায়গা দখল করবে। তবে সনাতন রাজনীতি বা দলাদলি ঠিক নয়। তা ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীরা যে রাজনৈতিক দলে থাকতে পারবে না, এমন কোনো আইন নেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে আওয়ামী লীগ তাদের উপকমিটিতের স্থান দিয়েছে। এখন সেখানে তারা থাকবেন কি থাকবেন না, সেটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। বিশেষজ্ঞ হিসেবে তারা থাকতেই পারেন।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, এটি তো একটা খসড়া। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নিয়েই এত বেশি ব্যস্ত যে সেখানে সময় দেওয়া নিজের জন্যই কষ্টকর হয়ে যাবে।

তিনি মনে করেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটাই সম্মানজনক পদ। এই পদে থেকে অন্য কমিটির সঙ্গে সময় দিলে নিজের প্রতিষ্ঠানের উপর সুবিচার করা হয় না।

ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, কারণ তখন কাজের সময়টা ভাগ হয়ে যায়। আর নৈতিক দর্শন তো আছে। সময় ভাগ করে দিলে ভালো কাজের সুযোগ আরো কমে যায়।

তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র জনৈতিক দর্শন থাকবে, দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে; কিন্তু সেই রাজনৈতিক প্রভাব অন্য কারো উপর ফেলা যাবে না। আমার পছন্দ অপছন্দ কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলতেই পারে, কিন্তু আমার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বা ক্লাসরুম কর্মকাণ্ডে আমার দর্শনের প্রভাব ফেলা যাবে না কারণ এখানে অন্য দর্শনের মানুষও থাকতে পারে।

আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকবে সেটা ঠিক, এখানে রাজনীতিমনা মানুষ থাকবে কিন্তু সেটার প্রভাব অন্য কিছুর উপর ফেলা যাবে না। তবে মানুষের কিছু বিষয় থাকে যেগুলোতে পছন্দ-অপছন্দের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কম্প্রোমাইজ নেই, সেটাতে কেউ আহত হলেও কিছু করার নেই।

শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, উপাচার্যরা দলীয় কোনো উপকমিটিতে থাকতে পারেন না পারেন, সে বির্তকে না গিয়ে শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে কিছু করতে পারছেন কিনা সেটা ভাবার বিষয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনেক ব্যস্ত থাকেন। এর পর রাজনৈতিক দলের কমিটিতে সময় দেবেন কীভাবে? সরকার নিশ্চয়ই দেশের শিক্ষা ও মানবসম্পদ নিয়ে বড় কিছু ভাবছে। এ কারণে এ ধরনের কমিটিতে শিক্ষকদের সদস্য কিংবা উপদেষ্টা করছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পেয়ে বহু নেতা উপকমিটিতে থাকতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দলটির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে জটলা করে থাকা এসব নেতাকর্মীর অনেকের অভিযোগ- প্রতিপক্ষের হামলা-মামলা থেকে শুরু করে সব নির্যাতনের শিকার হই আমরা; আর পদ পান এসিতে বসে সরকারের সুবিধা নেওয়া ভিআইপিরা। দলের দুর্দিনে কিন্তু আমরাই থাকি। কিন্তু দলের পদ পেতে এসব তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আমরা এখন যাব কোথায়?

সর্বাধিক পঠিত