ভবন ভাঙতে শেষবারের মতো ৭ মাস সময় পেল বিজিএমইএ
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙার জন্য সর্বশেষ আরো ৭ মাস সময় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানি শেষে আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেন- শেষ বারের মত এ সময় দেয়া হলো। আদেশে প্রথমদিকে ৬ মাস সময় দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা ৭ মাস করা হয়।
বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হাসেইন হায়দার। গত আগস্ট মাসে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন। এদিন রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে বিজিএমইর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী।
গত ৯ মার্চ তিন বছর সময় চেয়ে করা আবেদন উপস্থাপন করেন বিজিএমইএর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। পরে আদালত এ আবেদনের শুনানির জন্য ১২ মার্চ দিন ঠিক করেন। ওইদিন ছয় মাসের সময় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ভবন কর্তৃপক্ষের তিন বছর সময় চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি করে ওইদিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে ছয় মাস সময় মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভবনটি বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন। পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে। একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগ স্থগিত আদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প।’
হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়। পরে বিজিএমইএ আবারও এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। রিভিউতেও একই রায় বহাল থাকে।