খালেদা-সুষমার বৈঠক নিশ্চিতে ঢাকা-দিল্লি ও লন্ডনে তৎপরতা
আড়াই মাসেরও বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে আগামী সপ্তাহেই দেশে ফিরতে পারেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দেশে ফিরেই তার নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি দলকে চাঙ্গা করার জন্য ত্বরিত ফল লাভের জন্য আরো বেশকিছু ‘ক্রাশ কর্মসূচিও’ ঘোষণা দিতে পারেন। এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বৈঠক নিশ্চিতে বিএনপিতে ব্যাপক তোড়জোড় চলছে।
জানা গেছে, বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের নেতারা ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। আবার লন্ডনে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুইজন কেন্দ্রীয় নেতা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। উদ্দেশ্য একটাই, ঢাকায় সুষমা স্বরাজের সাথে খালেদা জিয়ার বৈঠক নিশ্চিত করা। বৈঠকের বিষয়ে নিশ্চয়তা পেলে বিএনপি চেয়ারপারসন ২২ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। আর ওইদিন দেশে ফিরলে ২৪ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে ঢাকায় বিএনপির চেয়ারপারসনের বৈঠক হতে পারে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে নেতৃত্ব দিতে এবার ঢাকায় আসছেন সুষমা স্বরাজ। আগামী ২২ ও ২৩ শে অক্টোবর ঢাকায় জেসিসি বৈঠক হওয়ার সূচি নির্ধারিত রয়েছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে এবারের জেসিসির বৈঠকটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঘাড়ে থাকা রোহিঙ্গাদের রাখাইনে তাদের নিজ নিজ বসতভিটায় নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরানোর প্রশ্নে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারতের জোরালো সমর্থন চায় ঢাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশে ২০১৮ সালে নির্বাচন হবে। তাই এই সময়ে প্রতিবেশী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে জানা গেছে, জেসিসি বৈঠকে যোগ দেয়ার উদ্দেশে সুষমা স্বরাজ ঢাকায় সফরে এলেও তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাইরে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীদের সাথেও সৌজন্য বৈঠক করবেন। গণভবনে সুষমা স্বরাজের জন্য আলাদা ভোজের আয়োজন করা হবে। এই অবস্থায় বিএনপির তরফ থেকে সুষমার সাক্ষাতের জন্য জোর লবিং করা হচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বিষয়ে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে যে ‘ভুল তথ্য’ আছে বলে বিএনপি দাবি করছে, সে ব্যাপারে দলটি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চায়। একই সাথে খালেদা জিয়া ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য এবং সকলের অংশগ্রহণে হয় সে ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশের জোরালো সমর্থন চাইবেন। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়েও দলটি তাদের অবস্থান তুলে ধরবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের কূটনৈতিক উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সুষমা স্বরাজ একটি বিশেষ বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য ঢাকায় আসছেন। তিনি এর আগেও যখন বাংলাদেশে আসেন তখন খালেদা জিয়া তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সুষমা স্বরাজের সাথে খালেদা জিয়ার চমৎকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়টি তাদের উপর নির্ভর করছে।
অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে সাক্ষাতের বিষয়ে তৎপরতার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এটা আমার জানা নেই। তবে ভারতসহ সকল দেশের কূটনীতিকদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। এর বেশি বলতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।
দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা জানান, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এলে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক তো হতেই পারে।
আর দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও কূটনৈতিক উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে চিকিৎসাধীন। তিনি কবে দেশে ফিরছেন তা কেবল তিনিই জানেন। তবে খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এলে হয়তো ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরে সাথে সাক্ষাৎ হতে পারে।
বিএনপির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ নিশ্চিতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বেশ তৎপর। সম্প্রতি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ আন্তর্জাতিক উইংয়ের কয়েকজন নেতা লন্ডন বিজেপি শাখার নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বিজেপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিজেপির দিল্লি শাখার নেতাদের সাথে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের নেতাদের যোগাযোগ করে দেন। এরপর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে এখনো খালেদা-সুষমা সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রায় শেষের দিকে। এখন তিনি সুবিধাজনক সময়ে দেশে ফিরতে পারেন। বিশেষ করে এখন পর্যন্ত দুইটি উপলক্ষ নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এক, ১২ অক্টোবর একটি মামলায় হাজির না হলেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতে পারে বলে একটা আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ঢাকায় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর। এই সফরে সুষমার সাথে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে সুষমা যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন খালেদা-সুষমা প্রায় ১৫ মিনিট ওয়ান টু ওয়ান (একান্তে) বৈঠক করেন। এবারও এমন একটা বৈঠকের আশা করছে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে ভারতের ব্যাপারে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার জন্য সুষমার সাথে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।