• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মিয়ানমারের দিক থেকে যুদ্ধের উসকানি ছিল: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমারের দিক থেকে যুদ্ধের উসকানি থাকলেও সতর্ক থেকে তা এড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে ফিরে শনিবার বিমানবন্দরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশটির উসকানির মধ্যেও সরকারের শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা বলেন তিনি।

বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারের রাখাইনে গত ২৫ অগাস্ট সহিংসতা শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ মিয়ানমারের সেনারা শরণার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে; সীমান্তে পেতে রাখে স্থল মাইন।

এর মধ্যেই অসংখ্যবার মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে, যাকে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকার পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নাম উল্লেখ না করে বলেন, আমাদের একেবারে প্রতিবেশী.. একটা পর্যায়ে এমন একটা ভাব দেখাল; আমাদের সঙ্গে যুদ্ধই বেঁধে যাবে.. এরকম একটা।

আমাদের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ সকলকে সতর্ক করলাম; যে কোনোমতেই কোনো রকম উসকানির কাছে তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নির্দেশ না দেব।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সফরে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও উসকানিতে পা না দিতে তার নেত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছিলেন।

তি‌নি (প্রধানমন্ত্রী) আমা‌দের‌কে ব‌লে‌ছেন, খুব সতর্কভা‌বে প‌রি‌স্থি‌তি মোকা‌বেলা কর‌তে হ‌বে। প্রভো‌কেশ‌নে সায় না দেওয়ার জন্য তি‌নি ব‌লে‌ছেন। তি‌নি সেনাবা‌হিনী, বি‌জিবি সবাইকে ব‌লে দি‌য়ে‌ছেন। আমরা কোনো উসকানিতে সায় দেব না।

উসকানিতে সাড়া না দেওয়ায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

এরকম একটা ঘটনা ঘটাতে চাইবেই। অনেকেই আছে এখানে নানা রকম উসকানি দেবে বা একটা এমন অবস্থা তৈরি করতে চাইবে, যেটা হয়ত তখন অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাবে; সেদিকে আমরা খুবই সতর্ক ছিলাম।

রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে সবাই যখন অং সান সু চির সমালোচনামুখর; তখন শেখ হাসিনা মিয়ানমারের নেত্রীর বিষয়ে একই পথে হাঁটেননি।

প্রতিবেশী দেশটিতে দীর্ঘ সেনা শাসনের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে সংসদে বলেছিলেন, “তিনি যে ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন.. ওখানে সংসদেও কিন্তু মিলিটারি প্রতিনিধি বেশি। পলিসি মেকিংয়ে তারা যেটা বলবে সেটাই।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের টানাপড়েন বহু দিনের। মিয়ানমারে নিপীড়িত ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল, এখন যোগ হয়েছে আরও ৫ লাখের বেশি।

বাংলাদেশ বারবার আহ্বান জানালেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কোনো তৎপরতা দেখায়নি মিয়ানমারের জান্তা সরকার। উল্টো রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’ বলে চিহ্নিত করে আসছে তারা।

এবার সমালোচনার মুখে স্টেট কাউন্সেলর সু চি শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তার দপ্তরের মন্তী ঢাকায় এসে আলোচনাও করে গেছেন।

শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে জোর আহ্বান জানান। এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় মিয়ানমারে ‘সেইফ জোন’ গড়ে তোলার প্রস্তাবও দেন তিনি।  

রাখাইনে পুলিশ ও সেনা চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী দল এআরএসএ-এর হামলার পরপরই সেখানে শুরু হয় সেনা অভিযান, যার ফলে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে।

এই দলটিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলছে মিয়ানমার সরকার। দলটির সঙ্গে আল কায়দার যোগাযোগ থাকার অভিযোগও উঠে আসছে।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সীমান্তে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব দেয়। তবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

সর্বাধিক পঠিত