• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

রাখাইনে ঢুকতে চায় জাতিসংঘ, অবাধ প্রবেশাধিকার নিয়ে সংশয়

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১০:১৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার রাখাইন প্রদেশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার না দেওয়াকে মিয়ানমারের ‘অগ্রহণযোগ্য’ পদক্ষেপ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবিক সহায়তা-বিষয়ক দফতরের প্রধান মার্ক লোকক জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যে তাদের একজন প্রতিনিধি রাখাইন সফর করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। তবে রাখাইনে প্রবেশ করতে পারলেও জাতিসংঘ স্বাধীনভাবে কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে।ওই সহিংসতায়  এ পর্যন্ত ৫ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখনও রাখাইন থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে নতুন করে দ্বিগুণ শক্তিতে অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এই বাস্তবতায় রাখাইন প্রদেশে অবাধ প্রবেশাধিকার চাইছে জাতিসংঘ। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা-বিষয়ক দপ্তরের প্রধান মার্ক লোকক সহিংসতাকবলিত অঞ্চলটিতে মিয়ানমার সরকারের কোনো ধরনের মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার না দেয়ার বিষয়টিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন।

চলমান সংঘাত শুরুর পর থেকেই রাখাইনে নিষিদ্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তা দানের প্রায় ২০টি সংগঠন তাদের কার্যক্রম বন্ধে বাধ্য হয়। সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্টত ত্রাণ কার্যক্রমে অসহযোগিতা ও বাধাদানের অভিযোগ তোলে ওই সংস্থাগুলো। সেখানে প্রবেশাধিকার নেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যান্য অংশেরও। সম্প্রতি ২০ জন কূটনীতিককে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রবেশ করতে দিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। সরকারি তত্ত্বাবধানে সেখানে গিয়েও মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা দেখে আসেন কূটনীতিকরা।

বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রাম এরই মধ্যে পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মার্ক লোকক গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই অঞ্চলটি সফর করে আসতে পারবেন।’ রাখাইনে সাহায্যকর্মীদের অবাধ ও স্বাধীন চলাচলের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আগেও বক্তব্য দিয়েছে জাতিসংঘ। মার্ক লোককের বক্তব্যেও গতকাল সে আহ্বানের পুনরাবৃত্তি ছিল। তবে জেনেভা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, ওই কর্মকর্তাকে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে কতোটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হবে সেটা পরিস্কার নয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সম্প্রতি জানিয়েছেন, অবস্থানরত ৯ লাখ রোহিঙ্গার গুরুতর মানবিক বিপর্যয় রোধে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশ।  সোমবার তার সঙ্গে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির দফতর মন্ত্রী টিন্ট সোয়ের বৈঠকের পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দফতর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়: ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতেই রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের দুই দেশের মধ্যেকার যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হতে হবে স্বেচ্ছামূলক। জোর করে কাউকে ফেরত পাঠানোর আইনগত সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত না পাঠানোর  ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশের মতো করে অ্যামনেস্টিও প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংযুক্তি চায়। বলেন, ‘যেকোনও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণের বাস্তব প্রয়োজন থাকে।’ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসাও করেন অড্রি গোরান। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকাকে 'ইতিহাসের অনন্য নজির' আখ্যা দেন তিনি।

মিয়ানমার সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ঘোষণা দিলেও পালিয়ে আসা শরণার্থীরা বলছেন, পশ্চিম রাখাইনে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান দ্বিগুণ জোরদার করা হয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশের সীমান্তে ছুটছে হাজার হাজার মানুষ।বহু গ্রাম এখন একেবারেই জনমানবশূন্য। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিরাপদ অঞ্চল (সেফ জোন) প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী জেনেভাভিত্তিক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম আইআরআইএন (ইনসাইড স্টোরি অব ইমার্জেন্সিস)-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনও রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে কাউকে ফিরিয়ে নিলে তাদেরও ওই ক্যাম্পে রাখবে মিয়ানমার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, নতুন শরণার্থী শিবিরগুলোও রোহিঙ্গাদের উন্মুক্ত কারাগার হতে যাচ্ছে।

সর্বাধিক পঠিত