নার্স নিয়োগ পরীক্ষা: টাকায় বিক্রি ‘কামিনী’
সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষার প্রশ্ন বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁস হয়। একটি চক্র চড়ামূল্যে এই প্রশ্ন বিক্রি করেছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আর সকালে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নে মিল রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই প্রশ্ন সাংবাদিকদের হাতেও পৌঁছায়।
গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) চার হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ১৬ হাজার ৯০০ জন আবেদন করেন। শুক্রবার রাজধানীর ১২ কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিপিএসসি পরীক্ষার জন্য চার সেট প্রশ্নপত্র ছাপায়। কামিনী, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা ও শিউলি। চার সেটেই ফাঁস হয়ে যায়। তবে পরীক্ষা হয়েছে কামিনী সেটে। ফাঁস হওয়া কামিনী সেট ও পরীক্ষা হওয়া কামিনী সেটে হুবহু মিল রয়েছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁস হওয়ায় অনেক প্রার্থী ও অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এই পরীক্ষা বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন বিক্রেতারা তাদের পরিচিতদের ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, হোয়াইটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন কেনাবেচা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স নেতা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তার কাছেও প্রশ্ন কেনার প্রস্তাব আসে। কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমিয়েছেন।
পরীক্ষা দেয়ার পর বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত রাবেয়া বলেন, পরীক্ষা দিতে গিয়ে শুনেছি প্রশ্ন নাকি ফাঁস হয়েছে। শুনে খুব খারাপ লেগেছে। যতটুকু আশা ছিল তাও আর নেই। পরীক্ষার আগে এভাবে প্রশ্নফাঁস হবে বুঝলে এতে কষ্ট করে পড়াশোনা করতাম না। এতে পড়াশোনা করে কোনো লাভই হবে না। যাদের টাকা আছে, যারা টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনতে পেরেছে, তাদেরই হয়তো চাকরি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স নেতা জানান, মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বিপিএসসি অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিএনপি-জামায়াতপন্থী কয়েক নার্স নেতা এ কাজ করে থাকে। তারা বিএনপির-জামায়াতপন্থী হলেও এখন তারা আওয়ামীপন্থী সেজে অপকর্ম করছে। এ গুলো দমন করতে না পারলে সরকারে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নু হবে।
তিনি আরো জানান, একজন নার্সিং শিক্ষার্থী ও বেকার নার্স সংগঠনের এক নেতাও এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ওই নার্সিং শিক্ষার্থী গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার গতিবিধিও সন্দেহজনক।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পর একটি চক্র নেমে পড়ে নিয়োগবাণিজ্যে। তারা একটি নিয়োগের জন্য ছয় লাখ টাকা করে নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে নার্সিংয়ের ডিজি তন্দ্রা শিকদার ও পরিচালক নাসিমা পারভীনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে ফোন করা হলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।