• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ইবি’র ভর্তি ফরমের টাকা যাচ্ছে শিক্ষকদের পকেটে!

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৫০
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রিন্ট
বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মোতাবেক ভর্তি পরীক্ষার টাকা জমা হচ্ছে না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল বাজেটে।  এইক সাথে বছর বছর ভর্তি ফরমের দাম বেড়েই চলেছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বছরের পর বছর বাড়ানো হচ্ছে এই ফরমের দাম। 
 
তবে ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়ের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাজেটে যাওয়ার নীতিমালা থাকলেও যাচ্ছে তার অর্ধেক। গত বছর ২৫ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে গেলেও এর আগে মাত্র ২০ থেকে ২১ শতাংশ টাকা ফান্ডে জমা হতো। আর বাকি ৭৬ থেকে ৮০ শতাংশ টাকা ইউনিট স্বমন্নয়কারীরা ভর্তি পরীক্ষায় সংক্রান্ত কাজে খরচ করা হয়। তবে খরচের পর প্রতিটা ইউনিটে একটা মোটা অঙ্কের টাকা উৎবিত্ত থাকে। এই উৎবিত্ত টাকা ইউনিটের শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটয়োরা করে নেয় বলে জানা গেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় কমে যাচ্ছে একই সাথে বাজেট ঘাটতি হচ্ছে। 
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে মোট ৭২ হাজার ৯ শত ১০টি ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফরম উত্তোলন করে ভর্তিচ্ছুরা। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪৫০ (চার্জসহ) টাকা। মোট ৩ কোটি টাকার ফরম বিক্রি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মোতাবেক ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যাওয়ার কথা থাকলেও গেছে মাত্র ২৫ শতাংশ। মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল বাজেটে যোগ হওয়ার কথা থাকলেও যোগ হয় মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। 
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মোট ৬৪ হাজার ৮ শত ৪০টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪৫০ (চার্জসহ) টাকা। এই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফরমের মূল্য ৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। সে সময় ৪০ শতাংশের জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যোগ হয় মাত্র ২১ শতাংশ। 
 
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে মোট ৮৭ হাজার ৩ শত ১৬টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪০০ (চার্জসহ) টাকা। সেবার প্রায় ৩ কোটি টাকার ফরম বিক্রি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মোতাবেক প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল বাজেটে যোগ হওয়ার কথা থাকলেও যোগ হয় মাত্র ৬০ লাখ টাকা। 
২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৭৪ হাজার ৫ শত ২৯টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪০০ (চার্জসহ) টাকা। এই শিক্ষাবর্ষেও ভর্তি ফরমের মূল্য ৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। সেসময়ও ৪০ শতাংশের জায়গায় মাত্র ২১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যোগ হয়। 
 
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে মোট ৮৮ হাজার ৩শত ২০টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৩৫০ (চার্জসহ) টাকা। এসময় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ফরম বিক্রি হয়। সেবার মাত্র ২০ শতাংশ টাকা মূল বাজেটে যোগ। 
এছাড়া ৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা থেকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অনার্স (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। একই সাথে এর বাইরে ১৭ টাকা চার্জ নির্ধারন করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা থেকে থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বাজেটে জমা না হওয়ায় বাজেট ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আকাম উদ্দিন জানান, ইউজিসির নির্দেশনায় ৪০ শতাংশ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গত বছর এসেছে ২৫ শতাংশ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাজেটে ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে জমা হতো মাত্র ২০ থেকে ২১ শতাংশ টাকা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় কমছে পাশাপাশি বাটেজ ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বর্তমান প্রশাসন ৪০ শতাংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন।
 
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি ফরম থেকে আয়ের মোট ৭৬ থেকে ৮০ শতাংশ টাকা ইউনিট স্বমন্নয়কারীরা ভর্তি পরীক্ষায় সংক্রান্ত কাজে খরচ করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিটা ইউনিটে একটা মোটা অঙ্কের টাকা উৎবিত্ব থাকে। তবে এই উৎবিত্ত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজে ব্যয় না করে ইউনিটের শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটয়োরা করে নেয় বলে জানা গেছে। 
 
এছাড়া বিগত বছর গুলোর পরিসংখ্যনে দেখা গেছে, প্রতি দুই বছর পর পর ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক ও বিজ্ঞান অনুষদের জন্য একটি বা দু’টি ইউনিট থাকলেও এখানে তিনটি করে ইউনিট। সে হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরমের মূল্য অনেক বেশি। 
 
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নয় বরং শিক্ষকদের পকেট ভারি করতে। ভর্তি পরীক্ষা থেকে মাত্র ২০-২৫ শতাংশ টাকা ফান্ডে জমা হয় আর মোটা অঙ্কের টাকা শিক্ষকদের পকেটে চলে যায়। অনেক শিক্ষক ভর্তি পরীক্ষা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত পায়।
 
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, আমি গত বছর ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছি। এবার ৪০ শতাংশ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাজেটে যোগ করা হবে। খুব শীঘ্রই আমাদের এফসির সভায় এটা পাশ করা হবে। 
 
ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের ভর্তি ফরমের মূল্য তুলনামূলক কম। বিভাগ বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে তাই প্রাসঙ্গিক কারণে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত