• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফানুস ছাড়াই প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করছেন বৌদ্ধরা

প্রকাশ:  ০৫ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হচ্ছে বৃহস্পতিবার। তবে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বৌদ্ধ মন্দিরকে বর্ণিল রঙে সাজানো বা ফানুস ওড়ানোর মতো প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বৌদ্ধরা উদযাপন করছেন তাদের অন্যতম বড় এই ধর্মীয় উৎসব। অনুষ্ঠান সূচিও করা হয়েছে সীমিত। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং আনুষ্ঠানিকতা কমিয়ে বেঁচে যাওয়া অর্থ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতেই এমন সীমিত পরিসরে পালন করা হচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্যবারের মতো সাজসজ্জার ঘটা নেই এই মন্দিরে। প্রধান ফটক সাজানো হয়নি ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে, লাল-নীল বাতিও নেই। রাখা হয়নি সাউন্ড সিস্টেমও। মন্দিরের ভেতরে খালি স্থানে অতিথিদের বসার জন্য কেবল চেয়ার রাখা হয়েছে।

বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন ইয়ুথের সভাপতি ও উদযাপন কমিটির মহাসচিব কাজল বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্যবার মন্দিরের সামনের ফাঁকা মাঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ফানুস উৎসব করা হয়। কিন্তু আগেই ঘোষণা করেছিলাম, রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে এই উৎসবের আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ফানুস উড়াব না আমরা। অন্যান্যবার মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয় এদিন। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবার রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠান সূচিতেও কাটছাঁট করা হয়েছে।

অনুষ্ঠান সূচি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক সাক্ষ্য বড়ুয়া বলেন, অন্যান্যবার পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মন্দিরের চারপাশে মাইক বসানো হয়। কিন্তু এবার ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আলোচনা সভার বাইরে তেমন কিছুই হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, ফানুস বা অন্য আয়োজনে যে টাকা খরচ হয়ে থাকে, তা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সেবায় গঠিত ত্রাণ তহবিলে দান করা হবে।

সীমিত পরিসরের প্রবারণা পূর্ণিমায় কী কী করা হয়েছে, জানতে চাইলে সাক্ষ্য বড়ুয়া বলেন, সকালে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ গ্রহণ ও বুদ্ধ পূজা, শীল গ্রহণ, অষ্টপরিকাসহ মহাসংঘদান, ভিক্ষুসংঘের পিণ্ডদান গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ ও ‘প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা থাকছে।

উল্লেখ্য, প্রবারণা পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তারা বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের পাপমোচন হয়। আষাঢ়ে পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি— এ তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা উৎসব পালন করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, মহামতি গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তার মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আর তাই প্রতিবছরই প্রবারণা পূর্ণিমার তিথিতে আকাশে ওড়ানো হয় শত শত ফানুস। প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা, হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ছোঁয়াইং দানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব পালন করে। ফানুস ওড়ালে ফানুসের সঙ্গে অতীতের সব পাপ উড়ে যায়— এই বিশ্বাস থেকেই নিজেদের পাপমুক্ত করতে প্রতিবছরই আকাশে ফানুস ওড়ান বৌদ্ধরা।

সর্বাধিক পঠিত