রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান, আরো কয়েক লাখের বাংলাদেশে প্রবেশের শঙ্কা
এখনও থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবশিষ্ট মানুষকে তাড়িয়ে দিতে রাখাইনে দ্বিগুণ শক্তিতে অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকা রোহিঙ্গা স্রোত আরও জোরালো হয়েছে।
রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা সেই বিপন্ন মানুষদের সঙ্গে কথা বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এসব কথা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের আশঙ্কা, এখনও রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে চলে আসবে। ফলে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই থাকা ৯ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সেখানকার অবশিষ্ট ৩ লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
মিয়ানমার সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ঘোষণা দিলেও রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা বলছেন, পশ্চিম রাখাইনে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ফের তাণ্ডব শুরু করেছে। তাদের তাড়িয়ে দিতে দ্বিগুণ জোরদার হয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, বহু গ্রাম এখন একেবারেই জনমানবশূন্য। প্রতিদিন বাংলাদেশের সীমান্তে ছুটছে হাজার হাজার মানুষ। এএফপি জানিয়েছে, বাংলাদেশে চার সপ্তাহে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার পর কয়েক দিন ঢল কিছুটা থেমেছিল। তবে গত কয়েকদিনে তা ফের বেড়েছে। এখন প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।
পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন মংডুর বাসিন্দা রাশিদা বেগম। তিনি এএফপিকে বলেন, স্থানীয়রা আমাদের কয়েক সপ্তাহে ধরে বলেছিল যে আমরা সেখানে থাকলে তারা নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু এরপর সেনারা এসে ঘরে ঘরে তল্লাশি শুরু করে। তারা আমাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
তিনি বলেন, স্থানীয়রা আশ্বাস দিয়েছিল, তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের ঘর থেকে বের করার পর বাড়িতে আগুন দেয়।
হাসিনা খাতুন নামের আরেক পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাদের বলেছিল, বাংলাদেশে যেও না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরা তাদের বিশ্বাস করেছিলাম। আমি গ্রামেই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমাদের চলে আসতে হল।
ফজলুল হক নামে স্থানীয় একজন কাউন্সিলর জানান, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে নৌকাবোঝাই মানুষের আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও সম্প্রতি আবার তা জোরালো হয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও বলপ্রয়োগের অভিযোগ করেছেন।
গ্রাম খালি করার জন্য সেনাবাহিনীর নির্দেশ পাওয়ার পর গত রোববার বাংলাদেশে আসেন নুরুল আমিন।
তিনি বলেন, সাপের মতো একেবেঁকে এক সারি রোহিঙ্গাকে তিনি উপকূলের দিকে যেতে দেখেছেন। আমরা যখন গ্রাম ছাড়ি, চারদিক থেকে গ্রামবাসীরা এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল।
এএফপির খবর বলছে, সেনাবাহিনী এখন আর কাউকে হত্যা করছে না, শুধুমাত্র বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বাড়িঘরে আগুনের কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
জাতিসংঘের মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াকিনস বলেন, কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। তাদের অনেকেই এখন বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের বসবাসও করতে হচ্ছে অনেক মানবেতর পরিস্থিতিতে।
ওয়াটকিনস বলেন, আমাদের লক্ষ্য ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকা। কারণ এরই মধ্যে ৮ লাখের বেশি অবস্থান করছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে ব্যাপক তৎপরতা দরকার। অবিলম্বে পর্যাপ্ত পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে।