‘অসুস্থ নন, জোর করে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে’
প্রধান বিচারপতি (এস কে সিনহা) অসুস্থ নন, তাকে জোর করে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতির সাথে এমন আচরণ করা থেকে প্রমাণিত হয় যে, সরকার অস্তিত্ব সংকটের ভীতিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটি নিতে বাধ্য করেছেন।’
বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি মাত্র ক’দিন আগে জাপান ও কানাডা সফর করে এসেছেন। এসব দেশে উন্নত চিকিৎসার থাকা সত্ত্বেও তিনি সেখানে কোন চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে দেশবাসী জানে না। এমনকি গত পরশু তিনি সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে বসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ফাইল সই করেছেন। নিয়মিত প্রথা অনুযায়ী মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) সকল বিচারপতিকে নিয়ে আইনজীবীদের সাথে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। অথচ গতকাল আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, প্রধান বিচারপতি নাকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু গত পরশু সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সাক্ষাৎপ্রার্থী সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাঁর (প্রধান বিচারপতি) পক্ষ থেকে উপস্থিত জনৈক পুলিশ জানিয়েছেন যে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি বলেছেন- ‘আমি সুস্থ আছি কথা বলতে পারবো না’। এসব কিছু থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। তাঁকে জোর করে দায়িত্ব বিরত রাখা হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে সরকারের এমন আক্রোশমূলক, ঘৃণ্য আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই এবং শক্তি প্রয়োগের দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে অনুগত করার সরকারি অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’
‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় পছন্দ না হলে তা রিভিউ করার সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরকার দেশের প্রবীণ বিচারপতিকে নজিরবিহীনভাবে ছুটি নিতে বাধ্য করার যে নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার বিরুদ্ধে দেশের আইনজীবী সমাজের পাশাপাশি সচেতন জনগণ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোট ও ভোটারবিহীন এক নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি কয়েক মিনিটের মধ্যে বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক বিশ্বাস লালন করার জন্য অন্য কোন দল গঠনের অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। এমনকি বিচার বিভাগকে প্রশাসনের অধীন করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ ও বরখাস্তের ক্ষমতা ছিল প্রশাসনের প্রধান রাষ্ট্রপতির হাতে। আজ আবার সেই রাজনৈতিক দলটিই কৌশলে ক্ষমতা দখল করে সুকৌশলে বাকশাল কায়েমের অপচেষ্টায় রত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে অনুগত বিরোধীদল সাজিয়ে প্রকৃতপক্ষে একদলীয় সরকার কায়েম করেছে। প্রশাসন ও নিম্ন আদালতকে কুক্ষিগত করেছে। অবাধে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার প্রতিনিয়ত বাঁধাগ্রস্ত করছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধীমতের জনগণের জন্য স্বাভাবিক রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো অসম্ভব করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে সুবিচার পাওয়ার সর্বশেষ ভরসাস্থল উচ্চ আদালতও আজ স্বৈরাচারী সরকারের আক্রমনের শিকারে পরিণত হয়েছে।’
সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সর্বসম্মত রায় দেয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ আদালত এবং তার সম্মানিত বিচারপতিগণকে সরকার প্রধান থেকে সরকারের মন্ত্রীবর্গ ও সরকারি দল এবং জোটের নেতাকর্মীরা অসাংবিধানিক, অযৌক্তিক ও কুৎসিত ভাষায় সমালোচনা করে চলেছেন। এমনকি জাতীয় সংসদে যে ভাষায় সর্বোচ্চ আদালত ও তার বিচারপতিগণের সমালোচনা করা হয়েছে তা শুধু অভূতপূর্ব নয়-অস্বাভাবিকও।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই, জাতি জানতে চায় আসলে প্রধান বিচারপতি অবস্থানটা কী? আমরা প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে প্রধান বিচারপতির ছুটি এবং অসুস্থতার ব্যাখ্যা দাবি করছি। তাছাড়া গতকাল বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।’
প্রধান বিচারপতি ইস্যুতে বিএনপিকে জড়িয়ে আইনমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়, আইনমন্ত্রী বলেন আর সরকার বলেন সারাক্ষণ আঙুলটা হচ্ছে বিএনপির দিকে। কারণ হচ্ছে বিএনপি সব সময় সত্য বাস্তব তা তুলে ধরে। রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে যে অন্যায় হচ্ছে এটাকে ঢাকতে উল্টো বিএনপির উপর চাপিয়ে দেয়া হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির ছুটিকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম থেকে উঠে আসা শঙ্কা থেকে এই প্রথম বিএনপি তাঁর সর্ম্পকে সংবাদ সম্মেলন করছে। এতে ষড়যন্ত্রের কিছু নাই। সরকার যেভাবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ঢেলে দিচ্ছে এর দায় তাদেরকেই নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।