• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কঠিন শর্তেই ভারতের তৃতীয় দফার ঋণ

প্রকাশ:  ০৪ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:০৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় নতুন করে বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারত। এই ঋণ আগের ঋণগুলোর মতোই কঠিন শর্তের। এ ঋণের অনুকূলে গৃহীত প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ পণ্য বা সেবা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে আনতে হবে। এছাড়া কমিটমেন্ট ফি, গ্রেস পিরিয়ডসহ পরিশোধের সময় কমসহ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে এই শর্তে আরও দু’বার ঋণ নিয়েছে সরকার। কিন্তু তৃতীয় দফায় কমিটমেন্ট চার্জ কমানোসহ শর্ত শিথিলের অনুরোধ করে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে এ নিয়ে নেগোশিয়েশন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হয়নি। ইআরডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, এই ঋণের অর্থ ব্যবহারে মোট ১৭ প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে তৃতীয় দফার এ ঋণ চুক্তির শর্ত শিথিলের বিষয় নিয়ে উভয় দেশের প্রতিনিধি দলের আলোচনা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘কমিটমেন্ট ফি’ (প্রতিশ্রুতি ফি) শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাতিল ও প্রথম এলওসির মতো কিছু অংশ অনুদান দেয়ার দাবি জানানো হয়। ভারতীয় প্রতিনিধি দল এসব দাবি ভেবে দেখবে বলে জানায়। যা পরে আর জানানো হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, ইআরডির পক্ষ থেকে চুক্তির কয়েকটি বিষয় নিয়ে শর্ত শিথিলের কথা বলা হয়েছে। আমরা কমিটমেন্ট ফি বাতিলের কথা বলেছি। যা তারা তারা (ভারত) নোট নিয়েছে। এছাড়া তৃতীয় এলওসির কিছু অংশ অনুদান ঘোষণার দাবি আসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর পক্ষ থেকে। কিন্তু তারা চুক্তির আগেই জানাবে বলে জানিয়েছিল ইআরডিকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঋণ দিয়ে বস্তুত একতরফাভাবে লাভবান হতে চায় ভারত। কেননা ভারতের অনেক পণ্যই গুণগত মানসম্পন্ন নয়। তবুও অন্য কোনো দেশ থেকে গৃহীত প্রকল্পের অর্থ দিয়ে মালামাল ক্রয় করা যাবে না। এর আগে এলওসির আওতায় বিআরটিসির যেসব বাস নেয়া হয়েছে, তার সবই নষ্ট হয়ে গেছে।

ঋণচুক্তি করতে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তিনদিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বুধবার সকাল ১০টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডির সচিব কাজী শফিকুল আযম ও ভারতের সংশ্নিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা নিজ নিজ পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির উপস্থিতিতে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এরপর ৫ অক্টোবর যৌথ সংবাদ সম্মেলন হবে। ওইদিনই ঢাকা ছাড়বেন জেটলি।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি সই হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে প্রকল্পভিত্তিক ঋণ চুক্তি হবে। অর্থছাড় হবে এরপর। তৃতীয় ধাপের ঋণের শর্ত আগের দুটির মতোই হবে। প্রস্তাবিত ঋণের সুদহার হবে এক শতাংশ। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ (শুধু আসল পরিশোধ) ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রস্তাবিত ঋণের অর্থে প্রকল্পের শতকরা ৭৫ ভাগ কেনাকাটা করতে হবে ভারত থেকে। বাকি ২৫ ভাগ জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। তবে কনস্ট্রাকশন সংক্রান্ত কাজে ৬৫ শতাংশ কেনাকাটা করার সুযোগ আছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ভারতের মনোনীত ঠিকাদারি কোম্পানি। ভারত সরকারের পক্ষে ঋণ দেবে সে দেশের এক্সিম ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি সবসময় বলছি এগুলো তো হচ্ছে মোটামুটি সাপ্লাায়ার্স ক্রেডিট। এসব ঋণে আপাতত দৃষ্টিতে দেখা যাবে সুদের হার হয়তো খুব একটা বেশি না। কিন্তু ভারত থেকে অধিকাংশ জিনিসপত্র কিনতে হবে। কেনার সময় কোনো টেন্ডার হবে না এর ফলে তো জিনিসের দাম বেশি হবে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাবে। এর মানে হচ্ছে, আমি সুদের হার কম নেব কিন্তু জিনিসপত্রে দাম বেশি নিয়ে সুদের হারের বিষয়টি পুষিয়ে নেব।

তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমি খুব একটা পক্ষপাতী না। এ চুক্তি করে আমাদের তেমন লাভ হবে না। পাইপলাইনে আটকেপড়া সহজ শর্তের প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার পড়ে আছে, আমরা ব্যবহার করতে পারি না। এসব সহজ শর্তের ছাড় করা গেলে এবং যথাযথভাবে ব্যয় করতে পারলে এ ধরনের ঋণ নেয়ার দরকার নেই। তাছাড়া ভারতের এটা তৃতীয় ঋণচুক্তি হতে যাচ্ছে। প্রথমটাই মনে হয় এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। দ্বিতীয়টাও খুব সামান্য ব্যবহার হয়েছে। কাজেই খামাখা একটার পর একটা চুক্তি করে দায়বদ্ধতা বাড়ানোর তো কোনো অর্থ হয় না।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে এলওসির মাধ্যমে ঋণ দিতে শুরু করে ভারত। প্রথমে ১০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি হয়। পরে ওই ঋণের ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে দেয় ভারত। ২০১৫ সালের দ্বিতীয় এলওসিতে ঋণচুক্তি হয় ২০০ কোটি ডলারের। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় ৫০০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসির ঘোষণা দেয় ভারত।

প্রথম দুটি এলওসির ২৯ প্রকল্পের মধ্যে বাস, ট্রাক, ট্রেনের ইঞ্জিন, বগি, ড্রেজারসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্পই বেশি। এ ছাড়া রেলসেতু ও রেললাইন নির্মাণ সংক্রান্ত কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। তৃতীয় এলওসিতে বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বেশি।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রথম এলওসির ১৫ প্রকল্পের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। গত সাত বছরে এসব প্রকল্পের বিপরীতে ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করেছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। প্রথম এলওসির আওতায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দেয়ার কথা। প্রথম এলওসির পর এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আরও দুটি এলওসি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় এলওসির ১৪ প্রকল্পের ১২টিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ভারত।

সর্বাধিক পঠিত