চীন থেকে আগতদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া
করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের কয়েকটি দেশ চীন থেকে আগতদের ঠেকাতে সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, সাম্প্রতিককালে চীনে অবস্থানরত বিদেশি ভ্রমণকারীদের তারা নিজ দেশে প্রবেশ করতে দেবে না। ডিসেম্বরে চীনে এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
এর আগে, রাশিয়া, জাপান, পাকিস্তান ও ইতালিসহ কয়েকটি দেশ একই ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং গত দুই সপ্তাহে যেসব বিদেশি নাগরিক চীনে ভ্রমণে গেছেন, তাদের সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
যেসব মার্কিন নাগরিককে হুবেই প্রদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যেখানে কিনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল, তাদেরকে ১৪ দিনের জন্য আলাদা করে রাখা হবে।
চীনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যারা ফিরে আসছেন তাদেরও এই দুই সপ্তাহ ধরে নিজেদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হবে।
শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলেছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যারা বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসবে, তাদের মধ্যে যাদেরকে পৃথক রাখা প্রয়োজন, এমন এক হাজার মানুষের জন্য পেন্টাগন আবাসনের ব্যবস্থা করবে। ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো এবং টেক্সাসের চারটি সামরিক ঘাঁটির প্রতিটিতে ২৫০টি করে কক্ষ সরবরাহ করা হবে।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে আরও এক ব্যক্তির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট জনে।
একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়া অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, চীন থেকে আসা নিজস্ব নাগরিকদের তারা দুই সপ্তাহের জন্য আলাদা করে রাখবেন।
এদিকে অনেক দেশের সরকার চীন থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে।
এরই মধ্যে ৩০০ জনেরও বেশি ভারতীয়কে উহান থেকে ফিরিয়া আনা হয়েছে। শনিবার তারা দিল্লিতে পৌঁছায়, একই দিনে প্রায় ১০০জন জার্মান ফ্রাঙ্কফুর্টে আসেন।
থাইল্যান্ডও সামনের কয়েকদিনের মধ্যে চীনের উহান শহর থেকে তার নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ বলেছেন, রাশিয়া সোমবার ও মঙ্গলবার হুবেই প্রদেশ থেকে তাদের কয়েকশ নাগরিককে সরিয়ে নেবে। দেশটি চীনা নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে।
আশা করা হচ্ছে যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনছে তারা সংক্রমণ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ওই মানুষদের দুই সপ্তাহের জন্য আলাদা করে রাখবে।
তবে বিশ্বের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ জাতীয় পদক্ষেপ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান শুক্রবার বলেছেন, ‘ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ভালোর চাইতে ক্ষতি বেশি করবে। কেননা এতে তথ্য ভাগাভাগি, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ ও অর্থনীতির ক্ষতি হবে।’
ডব্লিউএইচও সীমান্ত পারাপারের আনুষ্ঠানিক স্থানগুলোয় স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছে।
তারা সতর্ক করেছে যে, সীমান্ত বন্ধ করে দিলে যাত্রীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তারকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
একের পর এক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে চীনও। ওইসব দেশের সরকার, স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ উপেক্ষা করছে বলেও তারা অভিযোগ করে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেছেন, ‘ডব্লিউএইচও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুপারিশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র ঠিক তার উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, যা কোনো সদিচ্ছার পরিচয় নয়।’
নতুন ভাইরাস, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯-এনকভ নামে পরিচিত, এই ভাইরাসের প্রকোপে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩০৪ জন। সব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চীনের মধ্যে এবং সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে হুবেই প্রদেশে, ২৯৪ জন। এই প্রদেশ থেকেই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল।
শনিবার হুবেইতে আরও ৪৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সারা চীনজুড়ে ২ হাজার ৫৯০টি নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, এতে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৮০ জনে।
চীনের বাইরে প্রায় ১০০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর ঘটনা চিহ্নিত করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং জার্মানিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
এদিকে হুবেই প্রদেশের কর্তৃপক্ষ ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চান্দ্র নববর্ষের ছুটি বাড়ি দিয়েছে এবং জনসমাবেশ নিরুৎসাহিত করার জন্য বিবাহ নিবন্ধন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
চীন ২৪ জানুয়ারি থেকে চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি উদযাপন শুরু করে এবং চীনা কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের ভ্রমণ স্থগিত করার জন্য ইতিমধ্যে এই ছুটির সময় বাড়িয়ে দিয়েছে যেন বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজে ফিরে যেতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় না যেতে পারে।
হংকংয়ে হাসপাতালের কর্মীরা সোমবার থেকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সাথে এই অঞ্চলটির সীমানা পুরোপুরি বন্ধ করে না দিলে ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান দিয়েছেন।
হংকং সরকার ডব্লিউএইচও-এর সুপারিশের উদ্ধৃতি দিয়ে তা করতে অস্বীকার করেছে। বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাসের এই প্রকোপ সার্সের রোগের প্রাদুর্ভাবকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৩ সালে এই সার্স ভাইরাস ২৪টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
তবে নতুন ভাইরাসে মৃত্যুর হার সার্সের তুলনায় অনেক কম, ফলে কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে এটি তেমন মারাত্মক নয়।