‘চোখের সামনে সন্তানকে ডুবতে দেখেছি’
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নুর ফাতিমাও ছিলেন। তার সঙ্গে ছিল নয় মাসের শিশু। এক হাতে নৌকা আর অন্য হাতে ছেলেকে নিয়ে নাফ নদী পাড়ি দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নিজের ছেলেকে ধরে রাখতে পারেননি ফাতিমা। চোখের সামনে ডুবে গেছে তার বুকের ধন।
২৮ সেপ্টেম্বরের নৌকাডুবির ঘটনায় ৬০ জনের বেশি রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে। ডুবে মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। দুর্ঘটনার পর বেঁচে ফিরেছেন মাত্র ১৭ জন।
কক্সবাজারের ইনানি বিচ থেকে ২৩ জনের মরদেহ পরে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে ছিল ফাতিমার নয় মাসের শিশু সাইফুল রহমান। দুধের শিশুকে হারিয়ে ২০ বছর বয়সী ফাতিমা পাগলপ্রায়।
মাঝে মধ্যেই বিলাপ করছেন, ‘আমি কত করে চেষ্টা করলাম তাকে ধরে রাখতে, কিন্তু পারলাম না; চোখের সামনে সন্তানকে ডুবে যেতে দেখেছি।’
পরিবারের ১২ জন সদস্যের মধ্যে আটজনই মারা গেছে। এখন বেঁচে আছেন ফাতিমা, তার স্বামী, তিন বছরের এক ছেলে এবং ভাসুর নুরুল ইসলাম।
সব হারিয়ে কুতুপালং আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় মিলেছে ফাতিমার পরিবারের। তবে সেখানেও সমস্যা পিছু ছাড়েনি ফাতিমাদের।
ফাতিমা জানান, ‘এখানকার আবহাওয়া খুবই খারাপ। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। আজকে আমরা কিছুই খাইনি।’
চরম অনিশ্চয়তায় দিন পার হচ্ছে ফাতিমার মতো পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ঘুরে দাঁড়ানোটা তাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের। ফাতিমার ভাষায়, ‘আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। আমরা পরিবার হারিয়েছি, বাড়িঘর হারিয়েছি এমনকি প্রতিবেশীদেরও হারিয়েছি।’
তিনি আশা করেন, বিশ্ববাসী তাদের দিকে সদয় দৃষ্টিতে দেখবে।
সূত্র: আলজাজিরা