• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জাটকা সংরক্ষণে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ

কিছু অসাধু জেলেসহ দুর্বৃত্তদের রুখতে সকলের সহযোগিতা কামনা

প্রকাশ:  ১৩ মার্চ ২০২১, ১১:৩১ | আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২১, ১১:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

জাটকা সংরক্ষণে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার অনেক বেশি কঠোর অবস্থানে চাঁদপুরের প্রশাসন। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের দৃঢ়তা এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বে চাঁদপুরের মেঘনা অববাহিকায় বিরামহীন অভিযান চলছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে পৃথক পৃথক টিমে রয়েছে পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মৎস্য বিভাগের লোকজন। এঁদের সমন্বয়ে মেঘনা অববাহিকায় দিনরাত বিরামহীন অভিযান চলছে। এরপরও দুর্বৃত্তরা থেমে নেই। কিছু অসাধু জেলে স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তদের ছত্রছায়ায় জাটকা নিধন করে যাচ্ছে। তারা তাদের নৌকায় চার বা ততোধিক ইঞ্জিন লাগিয়ে অতি দ্রুতগতির নৌযানে পরিণত করে সেটা দিয়ে নদীতে জাটকা নিধন কাজে নেমে পড়ে। যখন


প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো নৌযান নদীতে টহল দেয় তখন ওই দুর্বৃত্ত জেলেরা প্রশাসনের নৌযানকে ধাওয়া করে অতর্কিত হামলা চালায়। এতো ঝুঁকির মাঝেও প্রশাসন দিনে ও রাতে শিফ্টওয়ারী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

গতকাল শুক্রবার 'জেলা প্রশাসক, চাঁদপুর' নামে ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত জেলা প্রশাসন তথা জেলা টাস্কফোর্সের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কার্যক্রম প্রকাশ করা হয়। নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরা হলো।

জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞার আলোকে গত ১ মার্চ হতে দুই মাসব্যাপী জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শুরু করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। অভিযান শুরুর প্রাক্কালে অভিযানের সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরির উদ্দেশ্যে বিগত ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ, চাঁদপুর জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার, মৎস্য বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম দৃঢ়ভাবে পরিচালনার জন্যে সমন্বিত অপারেশন্যাল প্ল্যান প্রস্তুত করা হয় এবং জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও জাটকা শিকার থেকে জেলেদের বিরত রাখার লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে জেলার চার উপজেলার ৪০,০০৫ জেলে পরিবারের প্রত্যেককে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৪ মাস ১৬০ কেজি ভিজিএফ (চাল) প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেইসাথে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা আহরণ বন্ধ রাখার ব্যাপারে জেলেদের সড়ঃরাধঃরড়হ করার জন্যে জেলেদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই নিজ নিজ এলাকায় জাটকা নিধন রোধে সরকারের গৃহীত উদ্যোগের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১ মার্চ হতে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল হতে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত মোট ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জেলা প্রশাসনের এঙ্িিকউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড , মৎস্য বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্সীসমূহকে নিয়ে ৮ ঘন্টা করে ৩ শিফটে ২৪ ঘন্টাব্যাপী নদী এবং নদীতীরবর্তী স্থানসমূহে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শুরু করা হয়। জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার অভিযানের ফলে এ পর্যন্ত ১৪৪৮ মেট্রিক টন জাটকা, ২৭.৭ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, জাটকা পরিবহনের নিমিত্তে ব্যবহৃত নৌকা এবং স্পিডবোট জব্দ করা হয়। সেইসাথে ৩৮টি মামলায় ৭১ জনকে কারাদ- প্রদান করা হয়। তাছাড়া এ অভিযানে এ পর্যন্ত মোট ১,২৬,০০০ টাকা অর্থদ- আদায় করা হয়।

জেলা প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জোর তৎপরতার ফলে চাঁদপুরের পদ্মা এবং মেঘনা নদীতে জাটকা নিধন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে এঙ্িিকউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানসহ অন্যান্য অভিযান হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, নদীর দুর্গম চরাঞ্চল এবং এলাকাসমূহে অসাধু জেলেরা স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় নদী থেকে কৃত্রিমভাবে চ্যানেল বা খাল তৈরি করে মাছ ধরা নৌকা এবং দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ হয়ে অবস্থান করছে। সেইসাথে তাদের অসাধু কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে তারা তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোকে ৪ বা ততোধিক ইঞ্জিনবিশিষ্ট দ্রুতগতিসম্পন্ন নৌকায় পরিণত করেছে। ফলে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখনই তাদেরকে আটক ও নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে, তখনি তারা মারমুখী হয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে থাকে। তাছাড়া দ্রুতগতিবিশিষ্ট জলযান ব্যবহারের ফলে তাদেরকে আটক করাও অনেক সময় দুরূহ এবং কষ্টকর হয়ে উঠে। এসব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয় সংঘবদ্ধ কতিপয় অসাধু চক্র প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে নদীতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এ সকল অসাধু চক্রের তৎপরতা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরোত্তর জোরদার অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।

এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসন চাঁদপুরের পক্ষ হতে সংশ্লিষ্ট সকল এজেন্সী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ এবং জনসাধারণের কাছে আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।

সর্বাধিক পঠিত