উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে এমপিদের ‘না’ ক্ষমতার ব্যালেন্স রাখতে কেন্দ্রের এই উদ্যোগ
তৃণমূল আওয়ামী লীগে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। এ জন্য চলমান উপজেলা সম্মেলনে বর্তমান এমপিদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে ‘না’ করেছেন খোদ দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন। উপজেলা সম্মেলনে বর্তমান এমপিদের কাউকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। তবে জেলায় পদে আসতে বাধা দেওয়া হবে না। দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দলকে পুনর্গঠনে উদ্যোগী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগকে ‘আওয়ামী লীগারদের’ হাতে ফিরিয়ে দিতে চান বঙ্গবন্ধুকন্যা। সে কারণে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। চলমান উপজেলা সম্মেলনে বর্তমান দলীয় এমপিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী করতে নিষেধ করেছেন। এর ব্যত্যয় যারা ঘটাবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সূত্রমতে, অনেক এমপি রয়েছেন যারা আগে দলের দায়িত্বশীল পদে না থাকলেও এমপি হওয়ার কারণে সংগঠনের উপজেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন। ফলে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। একসঙ্গে দুই পদে থাকার কারণে এলাকায় একক ‘নিয়ন্ত্রক’ হয়ে ওঠেন এমপিরা। সে বলয় ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান উপজেলা সম্মেলনে দলের এমপিদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, যারা দলের ত্যাগী নেতা-কর্মী রয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। একসঙ্গে দুই পদ (এমপি ও সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক) নয়। সে কারণে যারা যোগ্যতা থাকার পরও এমপি হতে পারেননি, দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা তাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করতে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সূত্রমতে, আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলায় সম্মেলনে জোর দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের সম্মেলনের আগেই ৪০টি জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলায় সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলার শীর্ষ নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, উপজেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে এমপিদের নয়। সভানেত্রীর এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তৃণমূলকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী এলাকায় যেন একক বলয় তৈরি না হয়, ক্ষমতার ব্যালেন্স রাখতেই এমপিদের উপজেলার শীর্ষ পদে আসতে ‘না’ করেছেন তিনি। কারণ এক ব্যক্তি দুভাবে ক্ষমতাধর হলে অধিকাংশ এলাকায়ই ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা তৃণমূলে এ বার্তা পৌছে দিচ্ছি।’
তৃণমূল নেতারা বলছেন, বর্তমান মাঠে রাজনৈতিতে প্রতিপক্ষ শক্ত না হওয়ায় দেশের অধিকাংশ স্থানেই আওয়ামী লীগের মুখোমুখি এখন আওয়ামী লীগই। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী আসনের চিত্র এক। দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর এসব অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় এমপিরা। অনেক এমপির ওপর ক্ষুব্ধ দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। শুধু তৃণমূল নয়, এমপি ও এমপিপন্থি নেতাদের অতি বাড়াবাড়ির কারণে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শীর্ষ পদে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের না রাখতে দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।