খাদ্য নিরাপত্তা
‘দুধে স্বনির্ভর হচ্ছে’ জাতীয় দৈনিকে শীর্ষ প্রতিবেদনের এমন শিরোনামের খবরে বলা হয়েছে, দেশের দুগ্ধশিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে। পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বেকার সমস্যা সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই শিল্প খাত। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ। মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক লাখ যুবকের। দেশে গড়ে উঠেছে ১২ লাখ খামার। উল্লেখযোগ্যভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও নীরবে শিল্পটির বিকাশ ঘটেছে দেশে। শিক্ষিত যুবকরাও খামার গড়ে তুলছেন। দেশীয় খামারিদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কম্পানিগুলো। দুধ দিয়ে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। উৎপাদিত দুধ থেকে তৈরি হচ্ছে উচ্চ মানসম্পন্ন শিশুখাদ্য, পাস্তুরিত তরল দুধ, মাখন, মিষ্টি, দই, পনির, ঘি, লাবাংসহ দুগ্ধজাত পানীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দুগ্ধজাত এসব খাদ্যপণ্য তৈরি করতে গিয়ে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। শুধু ভেজাল নয়, মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর এমন উপাদান, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এসব খাবার ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। গতকাল কালের কণ্ঠসহ জাতীয় সব দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারগুলো থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যসংক্রান্ত ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো। বিশেষ করে কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। হাইকোর্টে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
দুধ, দই, গোখাদ্যে কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, সিসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি খবর প্রকাশিত হয়। ওই খবরের ভিত্তিতেই হাইকোর্ট থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধ ও বিভিন্ন প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গোখাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কী পরিমাণ কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, রাসায়নিক, সিসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, তা নিরূপণ করতে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই কমিটি গঠন করে কমিটির কর্মপরিকল্পনার তথ্যও আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আদালত দুধ, দই ও পশুখাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চেয়েছেন।
যেকোনো মূল্যে আমাদের খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল ও বিষ মিশিয়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া যে অপরাধ, তা সবার জানা দরকার। যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের উপযুক্ত শাস্তির মুখোমুখি করার পাশাপাশি এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও সবার জানা দরকার। আমরা আশা করব, সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।