খেলাপি ঋণ আজ থেকে আর বাড়বে না : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ আজ থেকে আর বাড়বে না বলে ব্যাংক মলিকরা আশ্বস্ত করেছেন। বিদ্যমান খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ব্যাংক মালিকরা কথা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
বৈঠকে বিএবির সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এমপি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবালসহ ব্যাংক মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে অর্থমন্ত্রী বুধবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে খেলাপি ঋণ আদায় এবং খেলাপি ঋণ যেন আর বাড়তে না পারে সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই খেলাপি ঋণ নিয়ে তার কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে অর্থমন্ত্রীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিএবির সঙ্গে এ বৈঠক হয়।
বিএবির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মুস্তফা কামাল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন। এটা আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। সেখান থেকে ফিরেই বিএবির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করলাম।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে বসার আগেই আমার শর্ত ছিল একটা। কোনো কিছু আলাপ করার আগে আমার এক দফা। আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়তে পারবে না। আপনারা কীভাবে বন্ধ করবেন, কীভাবে টেককেয়ার করবেন, কীভাবে ম্যানেজ করবেন, আপনাদের ব্যাপার।
তিনি বলেন, ব্যাংক মালিকরা আমাকে কথা দিয়েছেন, আজ থেকে আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। তবে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে তা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে আমি সবার সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই বলেছি, আজকের পর থেকে খেলাপি ঋণ বাড়বে না, ইনশাআল্লাহ।
মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা করেছি। তারাই ব্যাংকের মালিক। সবাই প্রায় এসেছেন। তাদের সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আপনাদের কাছ থেকে ব্যাংকিং খাতের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো ভেরিফাই করব, মূল্যায়ন করব। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে। এই মূল্যায়ন শেষ হলে আমরা একটি ব্যবস্থায় যাব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি জায়গায় ঐক্যমতে পৌঁছেছি, মূল যে এলাকা, মূল যে চিন্তা সেটি হচ্ছে নন- পারফরমিং লোন। এটি আপনাদের উৎকণ্ঠা, জাতির উৎকণ্ঠা, আমাদের উৎকণ্ঠা এবং আমার উৎকণ্ঠা। তবে আমার উৎকণ্ঠা কিছুটা কম। কেননা, এরই মাঝে আমি দেখেছি, যেভাবে যে পরিমাণ পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়, সে পরিমাণ নন-পারফরমিং লোন না।
তিনি বলেন, দেশে নন-পারফরমিং লোনের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এর চেয়ে অন্যান্য দেশে আরো বেশি। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও আরো বেশি। নন-পারফরমিং লোন কমলে বাংক সুদের হার কমে যাবে। সুতরাং এটা কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া হবে না। নন-পারফরমিং লোন এখনো ম্যানেজেবল। আর এই ম্যানেজেবল লোন আর বাড়তে পারবে না। বৈঠকে উপস্থিত সবাই আমাকে নিশ্চিত করেছেন, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না, বরং যা আছে সেটিও ধীরে ধীরে কমাবেন। কীভাবে কমাবেন সেটি পরবর্তী মিটিংয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব। এটিই আলোচনার মূল বিষয় ছিল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যেহেতু খেলাপি ঋণ হয়েই গেছে। সে বিষয়ে তারা আমাকেও তথ্য দেবেন কী পরিমাণ, কোন ব্যাংকের কতটা খেলাপি ঋণ আছে। কার কাছে কতটা পাওয়া যাবে, এর মধ্যে কতটা আসল কতটা সুদ কোন অবস্থায় আছে। ঋণের বিপরীতে তাদের সমপার্শ্বিক অবস্থাও পরীক্ষা করে দেখা হবে। তাদের তথ্য আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সঠিক কাজটি শুরু করতে পরব, যথাযথভাবে করতে পারব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যারা ব্যবসা করেন বাংলাদেশে তারা সবাই প্রভাবশালী। পৃথিবীতে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন সবাই প্রভাবশালী। প্রভাবশালী দুরকম- যারা রাজনীতি করেন তারাও প্রভাবশালী, যারা ক্রিকেট ভালো খেলেন তারাও প্রভাবশালী, ব্যবসা-বাণিজ্য যারা করেন তারাও প্রভাবশালী। ব্যবসায়ীরা যদি প্রভাবশালী না হয় তাহলে বিনিযোগ কীভাবে আসবে? কোথা থেকে কর্মসংস্থান হবে? দারিদ্র্য কীভাবে কমবে? প্রভাবশালী যারা, যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তারা অর্থনীতির ৮২ শতাংশ। এদেরকে বাদ দিয়ে ১৮ শতাংশ নিয়ে অর্থনীতি সাজানো সম্ভব নয়। এটা করতে চাওয়াটাও একটা অবাস্তব চিন্তা। তাদেরকে ব্যবসা করতে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে ঋণখেলাপি না হয়ে।
সূত্র : রাইজিংবিডি