• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আইবিএস থেকে হতে পারে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রকাশ:  ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম অন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের একটা জটিল সমস্যা । এ রোগের উপসর্গগুলোও নানাবিধ। অন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা-যেমন প্রদাহজনিত অন্ত্রের সমস্যা বা অন্ত্রের ক্যান্সারের সাথে আইবিএসের উপসর্গসমূহের কদাচিত্ মিল খুঁজে পাওয়া যায় । তবে আইবিএস থেকে এ জাতীয় রোগের সৃষ্টি হয় না।
আইবিএস কি ?
মানবদেহে খাদ্যনালী ও অন্ত্র হলো মাংশপেশী দ্বারা তৈরি একটি নল (টিউব)। সে কারণে মাংশপেশীর যখন অতিরিক্ত সংকোচন বা প্রসারন হয় তখন অন্ত্রের ভিতরে খাদ্য বা মলের গতি ব্যহত হয়। ফলশ্রুতিতে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। কখনও কখনও ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য পর্যায়ক্রমে (Alteately) হতে থাকে। মলত্যাগের এই প্রক্রিয়ার উপর ব্যক্তির কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটাই আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম ।
কোন বয়সে হয় ?
১৮-৪০ বছরের মহিলা ও পুরুষের মধ্যে এ রোগের লক্ষণসমূহ পরিলক্ষিত হয় । পুরুষের তুলনায় মহিলারা এ রোগে বেশী ভুগে থাকেন ।
উপসর্গসমূহঃ
** পেট ব্যাথা- যা মলত্যাগ বা বায়ু নিরসণের পর কমে যায় ।
** খাবার পর পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি (Bloating)
** ডায়রিয়া- সাধারণতঃ সকালে মলত্যাগের সময় হয়ে থাকে ।
** কোষ্ঠকাঠিন্য - মল অত্যন্ত শক্ত অথবা ছোট ছোট পিন্ড হয়ে বের হয় । অধিকাংশ ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় চাপ প্রয়োগ করতে (কোত্ দিতে) হয়। কোনো কোনো রোগীর ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য পর্যায়ক্রমে (Alteately) হয়ে থাকে।
** পিচ্ছিল পদার্থ (গঁপঁং) বা চর্বিযুক্ত মল ।
** মলত্যাগের পরেও মনে হয় আবার মলত্যাগ করতে হবে (Incomplete Evacuation) ।
যে সমস্ত উপসর্গ আইবিএসের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়ঃ
ক্ষুধামন্দা, বমি বা বমিভাব, ঢেকুর ওঠা, মাথাব্যথা , ঘাম হওয়া, অনিদ্রা, জ্ঞান হারানো, রক্তমিশ্রিত মলত্যাগ-এগুলো লক্ষণ নয় ।
উপসর্গের ধরনঃ
ব্যক্তিবিশেষে ওইঝ্থ র উপসর্গগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । উপসর্গগুলো কয়েক দিন,কয়েক সপ্তাহ,কয়েক মাসও স্থায়ী হতে পারে । যদিও উপসর্গগুলো বেশির ভাগ সময় পর্যায়ক্রমে ঘটে থাকে । যেমন-ডায়রিয়া পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য বা বিপরিতক্রমে উপসর্গগুলো প্রকাশ পায় । পেটের ব্যথা (মাঝারি অথবা অসহ্য ব্যথা) কোন নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে হয় না তবে ঘুমন্ত অবস্থায় কখনই এ ধরনের ব্যথা পরিলক্ষিত হয় না ।
মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কঃ
সহনীয় পর্যায়ের মানসিক চাপ মানুষকে উদ্বিগ্ন করে। তবে অত্যাধিক মানসিক চাপ মানুষকে বিষাদগ্রস্থ করার ফলে এসব উপসর্গ গুলো বৃদ্ধি পায়। সমস্যাটা হলো বিষন্নতার কারণে অন্যসব বিষয়ের পাশাপাশি মানুষ অন্ত্রের (মলত্যাগের) বিষয়েও তখন দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে ফলে অন্ত্রের সমস্যা তৈরী হয় আবার অন্ত্রের সমস্যাও মানুষকে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে ।
ওইঝ থেকে মুক্তি পেতে মানসিক চাপ কমানো প্রয়োজন , দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপকে এড়ানো যায় না তবে আয়ত্তের মধ্যে রাখা সম্ভব । মানসিক চাপ কমানোর জন্য ব্যায়াম করুন । ব্যায়াম করার সময় মানসিক চাপ অনেকটাই কমে আসে ।
খ্যাদ্যাভ্যাসঃ
আঁঁশযুক্ত খাবার ওইঝ্থ কে প্রতিহত করে। তাই ধীরে ধীরে আঁঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শাকজাতীয় খাবার বা যে সমস্ত খাবার গ্যাস উদ্রেক করে তা পরিহার করুন । দুধজাতীয় খাবার অনেকের হজম হয় না, গ্যাস উদ্রেক করে বা প্রচুর বায়ু নিঃসরন করে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সও (দুগ্ধ জাতীয় খাবার হজমে সমস্যা) থাকতে পারে ।
ঔষধঃ
উপসর্গগুলো কমানোর জন্য বাজারে নানা ধরনের ঔষধ আছে তবে তা কখনই চিকিত্সকের পরামর্শ ব্যতীত খাওয়া ঠিক নয়।
** মনে রাখবেন যে কোন ঔষধ খাওয়ার আগে আপনার রোগ সম্পর্কে চিকিত্সককে জানানো বাঞ্ছনীয় ।
** আপনার চিকিত্সকই আপনার রোগ নির্ণয় করে যথাযথ পরামর্শ/ঔষধ দিয়ে থাকেন ।
** এটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ । 
ডা: আহমেদউজ জামান, 
এমববিবিএস, এমএস, এফআইসিএস (ইউএসএ), পিএইচডি
সহযোগী অধ্যাপক 
প্রক্টোসার্জারী বাংলাদেশ, ৭৯ শাহ মখদুম এভিনিউ, সেক্টর - ১২, উত্তরা, ঢাকা
ইমেইল: [email protected]
মোবাইল: ০১৭৮৬৪৪২২৯৯ 

সূত্রঃ ইত্তেফাক

সর্বাধিক পঠিত