স্কুলছাত্রের ‘স্মার্ট জুতা’ আবিষ্কার
ধর্ষণচেষ্টা হলেই পরিবারের কাছে পৌঁছে যাবে বার্তা-লোকেশন
চলার পথে নারীদের হয়রানি ও ধর্ষণ প্রতিরোধে অভিনব এক ডিভাইস যুক্ত স্মার্ট জুতার উদ্ভাবন করেছে আবদুল্লাহ আল সাইম নামে বরগুনার এক খুদে স্কুলছাত্র। সাইম বরগুনা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মো. হাবিবুল্লাহ কালামের ছেলে এবং বরগুনার এভারগ্রিন হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। শুধু জুতাই নয় সাইম বিমান, ড্রোন, অন্ধ মানুষের চশমা, রাডারসহ আরও অনেক কিছু উদ্ভাবন করেছে।
উদ্ভাবনকৃত ওই ডিভাইসযুক্ত স্মার্ট জুতা পায়ে যে কোনো নারী যদি ধর্ষণচেষ্টা বা আক্রমণের শিকার হন, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবারের কাছে পৌঁছে যাবে বার্তা। এছাড়া লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু থাকায় খুব সহজেই পুলিশের সহযোগিতা পেতে এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে স্বজনরা। ডিভাইসটিতে আরও যুক্ত করা হয়েছে ২৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক, যার মাধ্যমে একজন আক্রমণকারীকে খুব সহজেই পরাস্ত করতে পারবেন যে কোনো ভুক্তভোগী নারী। সাইম ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি শুরু করে ইলেকট্রনিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনের কাজ। বিভিন্ন প্লাটফর্মে তার তৈরি বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃতও হয়েছে অনেকবার। এবার সাইমের নতুন উদ্ভাবন, নারীদের নিরাপত্তায় স্মার্ট জুতা ভবিষ্যতের বড় স্বপ্নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন এলাকাবাসী।
শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল সাইমের উদ্ভাবন দেখতে তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিলের পাশে আরেকটি টেবিলে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র সামগ্রী। সেখানেই চলে তার নতুন নতুন উদ্ভাবনের কাজ। এছাড়া তার রুমের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে উদ্ভাবনকৃত বিভিন্ন ডিভাইস। দেয়ালের সঙ্গে ঝুলছে বিভিন্ন সময়ে পাওয়া তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া প্রত্যায়ন।
আবদুল্লাহ আল সাইমের সবশেষ উদ্ভাবন স্মার্ট জুতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশে যে সমস্ত ইলেকট্রনিক সামগ্রী পাওয়া যায় তার মাধ্যমেই জুতাটি তৈরি করেছি। এর মধ্যে একটি জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করেছি, যার মাধ্যমে ফোন কল, এসমএস ও লাইভ লোকেশন পাওয়া যাবে। কেউ আক্রমণ করলে প্রতিরোধ করতে অটো চার্জিং সিস্টেম ব্যাটারির সংযোগে ইলেকট্রনিক শক সিস্টেম সেট করা রয়েছে। এ স্মার্ট জুতাটি প্রাথমিকভাবে তৈরি করতে আমার প্রায় দুইমাস সময় লেগেছে। তবে এখনো কাজ চলমান রয়েছে, সব কাজ শেষ হলে এর মধ্যে যুক্তকরা সব কিছুই পুরোপুরি কাজ করবে।
আক্রামণের শিকার হলে একজন ভুক্তভোগী নারী কিভাবে সহযোগিতা পাবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুতাটির মধ্যে একটি পুশ বাটান সেট করা থাকবে, যেখানে অনিচ্ছাকৃত কোনো চাপ পরবে না। যখন কেউ বিপদে পরবে তখন ওই পুশ বাটনে চাপ দেবেন। এতে প্রথম চাপে অপরপ্রান্তে আগে থেকেই সেট করা নাম্বারে এসএমএস এবং পরে আরকটি চাপে সরাসরি কল চলে যাবে। ফলে ঘটনাস্থলে কি হচ্ছে সবকিছুই শুনতে পাবেন অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি। ট্রাকিং সিস্টেম চালু থাকায় গুগল ম্যাপের মাধ্যমে দ্রুত ভুক্তভোগীর কাছে পৌঁছানো যাবে। এছাড়া তৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে জুতাটিতে যুক্ত থাকবে ২৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক সিস্টেম।
সাইমের সহপাঠী মো. তাওহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণ প্রতিরোধে সাইম যে জুতা উদ্ভাবন করেছে তা দিয়ে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এছাড়া সাইম আরও অনেক কিছুই উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে সাইমের একের পর এক উদ্ভাবন আমাদের জন্য এক প্রকার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সরকারিভাবে যদি তাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।
ভবিষ্যতে ছেলেকে দেশের একজন বড় বিজ্ঞানী হিসেবে দেখার আশা নিয়ে সাইমের মা শাহনাজ আরা শারমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই ওকে যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি। তবে এসব কাজ অনেক ব্যয়বহুল। সরকার যদি ওর কাজে একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো একদিন সাইম দেশের জন্য আরও বড় কিছু করতে পারবে।
আবদুল্লাহ আল সাইমের বাবা মো. হাবিবুল্লাহ কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের আশা ছেলে বড় হয়ে একজন বিজ্ঞানী হবে। দেশের জন্য কিছু করবে। তবে এ কাজে সফল হতে তার পেছনে অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমি একজন সামন্য প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক অতিরিক্ত অর্থ খরচের সামর্থ্য আমার নেই। সরকার যদি আমার ছেলের পাশে এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো আমাদের মনের আশা পূরণ হবে।
এভারগ্রিন পাবলিক মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার আকান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইম অনেক কিছু নিয়ে গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চা অনেক কিছু উদ্ভাবন করেছে। বিগত সময়ে সে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়ে জেলায় প্রথম হয়েছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় উদ্ভাবনে তার উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক বেশি এবং মেধাও রয়েছে। আমরা তাকে জাতীয় পর্যায়ের তার উদ্ভাবন নিয়ে অংশগ্রহণ করতে সহযোগিতা করছি। তার এমন কাজে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এমন সব গবেষণা ও উদ্ভাবনে যদি সাইম সরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সহায়তা পায় তাহলে আশাকরি তার প্রতিভার আরও বিকাশ ঘটবে।