• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, অবস্থান ও আঘাতের সময় জানাল আবহাওয়া অফিস

প্রকাশ:  ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে মোন্থা। রোববার দিবাগত রাত ৩টায় নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সংস্থাটি বলছে, আগামীকাল মঙ্গলবার ভারতের উড়িষ্যা ও তামিলনাড়ু উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে এটি। অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি আঘাতের ঝুঁকি না থাকলেও তার প্রভাব থাকবে। উপকূলীয় এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বাতাস বইতে পারে, আর দেশের উত্তর ও দক্ষিণের কিছু জেলায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। আজ সোমবার সকালে আবহাওয়া অধিপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’-য় পরিণত হয়েছে। সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী, এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোন্থা’। এটি থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম, থাই ভাষার শব্দটির অর্থ সুন্দর বা সুবাসিত ফুল। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম আগেভাগেই নির্ধারণ করে রেখেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা সমকালকে বলেন, রোববার দিবাগত গভীর রাতে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর সম্ভাব্য আঘাতস্থল ভারতের উড়িষ্যা বা অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল। আগামীকাল মঙ্গলবার এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে উঠে দুর্বল হয়ে ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে। তবে এর প্রভাবে আগামী বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। 
কাজী জেবুন্নেছা জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং দক্ষিণের খুলনা অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে চলতি মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকাতেও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হতে পারে।
কোথায় অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়
দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অর্থাৎ, ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছে। এটি রোববার দিবাগত রাত ৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০  কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। 
কখন আঘাত হানবে
আবহাওয়া অফিস বলছে, এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ (এক) নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে দুই নম্বর (পুন:) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে মাচিলিপত্তম ও কালিঙ্গাপত্তমের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ স্থায়ী বেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার এবং দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। 
শক্তির বিচারে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি মাত্রায় ভাগ করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার হলে তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হলে তাকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। ১১৮-২১৯ কিলোমিটার হলে তাকে ‘হারিকেনের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বা ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়।
সর্বশেষ চলতি সমাসের শুরুতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। সে ঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি।