• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জে কড়ৈতলী বাবুবাড়ির দিঘি নিয়ে ধুম্রজাল

প্রকাশ:  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলীর বাবুরবাড়ির দিঘি নামে পরিচিত দিঘিটি নিয়ে যেন ধোঁয়াশা কাটছেই না। গত কদিনে কয়েকবার মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এবং সেটি অপরপক্ষ প্রতিহত করার ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এলাকায়।
একাধিকবার মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া চেষ্টার ঘটনা, দিঘিটির প্রকৃত মালিক কে? পুকুরে চাষকৃত মাছের মালিকইবা কে?  এমন পরিস্থিতে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে-দিঘি তুমি কার?
৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা শমশের আহম্মদের দেয়া তথ্য মতে, সাবেক ২০৮নং হালে ৩৫নং কড়ৈতলী মৌজার ১৬২৯ সিএস দাগ ও ৪৯৩০ বিএস দাগে ৯.০৫ একর সম্পত্তি জুড়ে রয়েছে দিঘিটি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোঃ সহিদউল্লা তপাদারের কাছ থেকে সাব লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন দাবি করা মুশফিকুর রহমান ইমু এই প্রতিবেদককে জানান, গত তিনবছর ধরে এই দিঘিটি আমি মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল্লাহ তপাদার আঙ্কেলের কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকায় বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত এক বছর করে মৌখিকভাবে সাব লিজ নিয়ে আসছি এবং মাছ চাষ করছি। গত দুই বছর আমি ঠিকঠাক মতো মাছ চাষ করতে পারলেও এ বছর টাকা দেয়ার পর আমি দিঘিতে মাছ চাষ করায় আমার চাষকৃত মাছ তুলে নিয়ে যাওয়া ও হামলা করার চেষ্টা করছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটি পক্ষ। এ বছর দিঘি লিজ নেয়ার জন্যে কত টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য দু বছরে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে সহিদুল্লাহ তপাদার আঙ্কেলের কাছে দিঘিটি সাব লিজ নেয়া হলেও এ বছর তাঁকে তিন লক্ষ টাকা দেই। অথচ মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল্লাহ আঙ্কেল এখন পুরোপুরি অস্বীকার করে বলছেন আমি নাকি তাঁকে কোনো টাকাই দেইনি। কড়ৈতলী বাজারসহ আশপাশের মানুষজন দেখেছেন আমি নিজে কীভাবে দিঘিটি পরিস্কার করে দিঘিতে মাছ ফেলার পর মাছগুলোকে নিয়মিত খাওয়া খাওয়ানো ও পাহারা দেয়াসহ মাছের পরিচর্যা করে আসছি। মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল্লাহ কাকা এখন যে বলছেন আমি নাকি তাকে কোনো টাকাই দেইনি, আমি যদি টাকা না দিয়ে থাকি তাহলে গত বৈশাখ মাস থেকে আমি কীভাবে পুকুরে মাছ ফেলে তার পরিচর্যা করে আসছি। তার কাছ থেকে যদি আমি সাব লিজ যদি নাই নিতাম এবং টাকা না দিতাম তাহলে আমার মাছ ফেলার সময় কিংবা পুকুরের আনুষঙ্গিক কাজ করার সময় তিনি কেনো আমাকে বাধা দেননি? বর্তমান সময়ে যখনই দিঘির মাছগুলো বড় হয়েছে এবং মাছ তোলার সময় হয়েছে তখনই আমার চাষকৃত মাছগুলো ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। দিঘিতে এখন সবমিলিয়ে প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ টাকার মাছ আছে।

মুশফিকুর রহমান ইমু আরো জানান, ৩০ আগস্ট আনুমানিক রাত ২টায় সাবেক ইউপি সদস্য উজ্জ্বল পাটওয়ারী, মামুন পাটওয়ারী, শ্যামল বসু, সুমন সর্দার এই চারজনসহ বহিরাগত শতাধিক লোক নিয়ে আমার পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। তখন আমি মাছ ধরতে বাধা দেয়ায় এক পর্যায়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বিষয়টি জানার পর এসআই সুমন ও এসআই হাসান ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষকে মাছ না ধরার নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষকে থানায় যেতে বলেন। এদিকে পুনরায় মামুন পাটওয়ারী গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমার পুকুর থেকে মাছ চুরি করেছেন, যার প্রমাণ হিসেবে আমার কাছে মাছ চুরি করার সময়কালের ছবিও আছে।
সংবাদের অনুসন্ধানে কথা হয় কড়ৈতলী বাজারের কজন ব্যবসায়ীর সাথে। এ সময় ব্যবসায়ীরা জানান, গত তিন বছর ধরেই দেখে আসছি ইমু পুকুরে মাছ ফেলে সেগুলোর পরিচর্যা করছেন এবং পুকুরের যাবতীয় কাজ সে করছে। কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা বুলু চন্দ্র দাসের সাথে। তিনি বলেন, সাবেক মেম্বারের ছেলে ইমু এই দিঘিতে মাছ চাষ করতে দেখতেছি গত কয়েক বছর। এখন আবার শুনি কে বা কারা পুকুরের মাছগুলো ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আবুল হাসেম জানান, আমি নিজে পুকুরের মাছের খাবার দেয়ার কাজ করেছি, ইমু আমাকে পুকুরে মাছের খাবার দেয়ার জন্য কাজে নিয়েছিলেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোঃ সহিদউল্লা তপাদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, সাব লিজ দেয়ার প্রশ্নই আসে না এবং তার সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। দিঘিতে আমরা নিজেরা মাছ ছাড়ছি নিজেরাই মাছ চাষ করছি। এ নামের কাউকে আমরা কখনোই সাব-লিজ দেইনি। সবশেষ মুক্তিযোদ্ধা দেলু পাটওয়ারীকে দিয়েছিলাম, দেলু পাটওয়ারীর ছেলে মাছ চাষ করেছেন। কড়ৈতলী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বললেন, পুকুরে ইমুকে মাছ চাষ করতে দেখে আসছেন তারা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাহা মিথ্যাবাদী, তারা মিথ্যা কথা বলছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ এমএ ওয়াদুদের (অবঃ) কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে সাব লিজের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমাকে কিছুই জানান নি। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর বিভিন্নভাবে আমি খবর নিয়ে জানতে পেরেছি কেউ একজন দিঘিতে মাছ চাষ করেছে। যদি লিজ'ই না দিতো তাহলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওই ব্যক্তিকে মাছ ছাড়তে দিলো কেনো, পিজিক্যালি কেউ যদি দিঘিতে মাছ চাষ করে তাহলে কেউ একজন গিয়ে বললেই তো হলো না আমি দিঘি লিজ আনছি, আমি যদি লিজ এনেই থাকি তাহলে অন্য কেউ মাছ চাষ করে কীভাবে? মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে লিজকৃত কোনো কিছু কমান্ডার ব্যক্তিগতভাবে সাব লিজ দিতে পারেন না।